ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

সুদানের সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে যে সংঘাত চলছে, তা থামাতে বিবাদমান দু’পক্ষে বার বার যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা দিয়ে শান্তি সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

কিন্তু সেসব আহ্বানে তেমন কাজ হচ্ছে না; বরং দেখা গেছে— দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত অব্যাহত আছে।

সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ এপ্রিল সামরিক বাহিনী-আরএসএফ সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সুদানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫১২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ১৯৩ জন। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা মন্ত্রণালয়ের হিসেবের চাইতে অনেক বেশি বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো, যিনি জেনারেল হেমেদি নামেই বেশি পরিচিত— চলমান এই পরিস্থিতির জন্য দেশটির সামরিক বাহিনী এবং সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহানকে দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী ‘নিষ্ঠুরতা’ বন্ধ করলেই কেবল শান্তি সংলাপ শুরু করা সম্ভব।

এ পর্যন্ত মোট ৩ বার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বৃহস্পতিবার রাতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ তিন দিন বাড়াতে সম্মত হয় দুই বাহিনী।

কিন্তু শুক্রবার বিবিসিকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল হেমেদি জানান, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও আরএসএফ যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে বোমা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী।

‘আমরা সুদানকে ধ্বংস করতে চাই না। তারা (সেনাবাহিনী) নিষ্ঠুরতা বন্ধ করুক; আমরা শান্তি সংলাপে বসব।’

২০২১ সালে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির, যিনি প্রায় ৩ দশক সুদানের ক্ষমতা আঁকড়ে ধরেছিলেন। দেশটির সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ঘটে এই অভ্যুত্থান। অভ্যুত্থানের মূল নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং জেনারেল হেমেদি উভয়েই।

বশিরকে উৎখাতের পর ‘সভরিন কাউন্সিল (সার্বভৌম পরিষদ) নামের একটি পরিষদ দেশটি পরিচালনা করে আসছে। সেই পরিষদের প্রেসিডেন্ট সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট আরএসএফের শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল হেমেদি।

সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে হেমেদি বলেন, জেনারেল বুরহানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা নেই। তবে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের ঘনিষ্টদের সঙ্গে জেনারেল বুরহানের ব্যাপক ঘনিষ্টতা এবং তাদেরকে সরকারে অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টার কারণে বুরহানকে এখন বিশ্বাসঘাতক মনে করেন তিনি।

রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সুদানের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশ্রয় দিতেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির। তার শাসনামলের ৩০ বছর কঠোর ইসলামি শাসন ও শরিয়া আইন জারি ছিল সুদানে।

বিবিসিকে হেমেদি জানান, সেনাপ্রধান জেনারেল বুরহানও ওমর আল বশিরের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।

‘দুর্ভাগ্যবশত, বুরহানকে চালাচ্ছে কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীগুলো। তিনি তাদের স্বার্থকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন,’ বিবিসিকে বলেন জেনারেল হেমেদি।

আরএসএফ-কে মূল সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ১০ বছর বিলম্ব চায় সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, আরএসএফ দুই বছরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া উচিত বলে মনে করে।

সুদানে বেসামরিক শাসনে ফেরার প্রস্তাবিত পদক্ষেপের মূলে আছে আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার এ বিষয়টি। কিন্তু এর সময়সূচি নিয়ে দু,পক্ষের মধ্যে বিরোধের জেরেই শুরু হয়েছে সংঘাত।

বিবিসিকে হেমেদি বলেন, ‘আমি বেসামরিক সরকারের অপেক্ষায় আছি, যেটি একটি সম্পূর্ণ বেসামরিক সরকার হবে। আমার নীতি এটাই।’

যুদ্ধরত সেনাসদস্যদের উদ্দেশে জেনারেল হেমেদি বলেন, ‘আরএসএফ সদস্যরা সেনাবাহিনীর শত্রু ছিল না। সংকটকালে দেশকে রক্ষায় সেনাবাহিনী ও আরএসএফ কাঁধে কাঁধ লিয়ে লড়াই করেছে।’

‘আমরা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব না। দয়া করে আপনারা নিজ নিজ ডিভিশনে চলে যান, আমরা আপনাদের সঙ্গে লড়াই করব না,’ সেনাসদস্যদের বলেন হেমেদি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...