পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজকে ধ্বংস করতে পদচ্যুত সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ উঠেছে। সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের দাবি, নিজ স্বার্থ হাসিলের লক্ষে কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদসহ সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই এই চক্রান্তের হাত থেকে কোম্পানিটিকে রক্ষায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহযোগিতা চায় সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ। তবে আনিসুর রহমান অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন।
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষের দাবি, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের হাত ধরেই কোম্পানিটি ব্যবসা ও আর্থিক সক্ষমতায় ফিরতে শুরু করেছে। করোনা এবং এর পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের মধ্যেও সিমেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের মুনাফা হয়েছে। পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়েছে। এ অবস্থায় আনিসুর রহমান কোম্পানিটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে।
জানা গেছে, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের হাত ধরে সিমটেক্স এগিয়ে গেলেও কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তাতে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে কোম্পানিটির চেয়ারম্যানের পদ হারিয়ে তিনি এখন ক্ষুব্ধ। ফলে তিনি কোম্পানিটির কারখানায় ভাড়া করা সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের মারাত্মকভাবে জখম করে ব্যবসার অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে পদচ্যুত সাবেক চেয়ারম্যানের অভিযোগের আলোকে বিএসইসি সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ পুনর্গঠনের কথা ভাবছে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে চায় কমিশন। সেখানে শেখ মামুন খালেদকে স্বতন্ত্র পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছে কমিশন। তবে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগ আছে।
এ পরিস্থিতিতে সাবেক চেয়ারম্যানের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগের আলোকে সিমটেক্সের পর্ষদ পুনর্গঠন কতটা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করবে, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোম্পানির বৃহত্তর স্বার্থে কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখতে পারে বলে আশা করছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা গেছে, চাকরি করে কোম্পানিটির মালিকের দেওয়া ২ শতাংশ শেয়ার পেয়ে চেয়ারম্যান হয়ে ছিলেন আনিসুর রহমান। যার বিরুদ্ধে অর্থ লোপাট করার অভিযোগে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর পদ হারানোর ক্ষোভে তিনি কোম্পানিটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে গত বছরের ৩১ আগস্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ফ্যাক্টরিতে আক্রমণ চালায়। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হত্যার হুমকি দেয়। তারা শ্রমিকদের অতর্কিতভাবে মারধর করে এবং গুলি চালায়। এতে কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ রিপন শেখ, ড্রাইভার রফিক, ট্রান্সপোর্ট অফিসার জাহাঙ্গীর, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) শ্রীনিবাসা রাও তাল্লোরী (ভারতীয়) আহত হন। পরে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ৫টি শটগান, ৩৭ রাউন্ড গোলাবারুদ, একটি বিদেশি পিস্তলসহ আনিসুর রহমান ও আরও ৭ জনকে আটক করে।
এদিকে আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর অস্ত্র আইনে পুলিশ বাদী হয়ে সাভার মডেল থানার মামলা (মামলা নং-৪) দায়ের করেছে। আর সাভার মডেল থানায় একই তারিখে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক মামলা (মামলা নং-৩) দায়ের করেছে। এছাড়া কারখানায় হামলায় গুরুত্বর আহত রিপন শেখের পরিবারের দায়েরকৃত মামলা (ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বাগেরহাট মিস কেস নং ২৯০/২২) এবং সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক দায়ের করা আর্থিক জালিয়াতি বা দুর্নীতি মামলা (যুগ্ম জেলা জজ আদালত, ঢাকা মামলা নং ০৭/২৩ তারিখ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) চলমান রয়েছে। পরবর্তীতে ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর আনিসুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়ে সাভার মডেল থানায় আবারও একটি মামলা দায়ের করার জন্য প্রচেষ্টা চালান। তবে থানা মামলা নিতে সম্মতি না হলে সিজেএম কোর্ট থেকে মিথ্যা অজুহাতে এফআইআর করেন। যেখানে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহমান সাকিব, হেড অফ কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স জনাব মো. জাহিদ, কোম্পানির সচিব আশিষ কুমার সাহা ও কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার পরিমল চন্দ্র পালকে আসামী করা হয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোম্পানির এজিএমে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের সরাতে বিএসইসিকে প্রভাবিত করা হয়েছে। এখন যাদের দেওয়া হয়েছে- তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতে কোম্পানি ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হবে। তারা কোম্পানির দায়িত্ব নিলে, মালিক পক্ষ কোম্পানিটির উৎপাদনে জড়িত থাকতে পারবে না। আর তখন ব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিবে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। আনিসুর রহমান ও তার চক্র প্রতিষ্ঠিত এ কোম্পানি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।
এদিকে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বলেন, লুটপাটে বাধা দেওয়ায় আমাকে সরিয়ে দেওয়া দিয়েছে। এখন তারা নিজেরা সমস্যায় পড়ে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছে। পাবলিক কোম্পানির অনিয়ম দেখার দায় দায়িত্ব বিএসইসির। তারা বিষয়টি দেখেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, সিমটেক্সের বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ তথ্য জানতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়মিত মুনাফা অর্জন ও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। প্রায় ৮০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটি করোনা কাটিয়ে উত্থানের পথে রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের কোম্পানিটি ৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। পরবর্তী ২০২১-২২ অর্থবছরে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে।