মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে মাত্র দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তার পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আরও তিন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। তাদের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট এ সময়ে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাড়ে ৪ লাখের মতো লোক পাঠিয়ে ওই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, সাবেক তিন সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, বেনজীর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
শনিবার (২৭ আগস্ট) দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) গত দেড় বছরে মালয়েশিয়া যেতে প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ভেরিটে ইনকর্পোরেটেডসহ পাঁচটি সংস্থার গবেষণায় বেরিয়ে আসে, কর্মী পাঠাতে সরকার-নির্ধারিত জনপ্রতি ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা হলেও বাস্তবে সিন্ডিকেটটি প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নিয়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে দেড় বছরে মোট ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হলেও সেখানে সরকার নির্ধারিত ফি ছিল মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত ফি হিসেবে বাকি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, তাদের এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও জড়িত। কেননা শ্রমিকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং সিন্ডিকেট তৈরির রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি এমন অনিয়মসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে সংস্থাটির উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্ব তিন সদস্যের টিম করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নেন ফেনীর আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। যাত্রা শুরুর সাড়ে তিন বছরে তার মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে বিদেশে গেছেন মাত্র ১০০ কর্মী। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট চক্রে যোগ দেওয়ার পর গত দেড় বছরে দেশটিতে প্রায় ৮ হাজার কর্মী পাঠায় একই রিক্রুটিং এজেন্সি।
নিজাম উদ্দিন হাজারী ছাড়াও কাশমেরী কামাল, নাফিসা কামাল, দুই সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীরও রিক্রুটিং এজেন্সি রয়েছে মালয়েশিয়া চক্রে। তাদের মধ্যে ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল ৮ হাজার ৫৯২ জন, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল ৭ হাজার ৮৪৯ জন এবং কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ ৭ হাজার ১৫২ জন ও নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল ২ হাজার ৭০৯ জন শ্রমিক পাঠিয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো এজেন্সির তালিকা বলছে, দেশটিতে এককভাবে শ্রমিক পাঠানোর শীর্ষে রয়েছে ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বায়রার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেনী-৩ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। প্রতিষ্ঠার পর এটি মধ্যপ্রাচ্যে আড়াই হাজারের মতো কর্মী পাঠিয়েছে। তবে মালয়েশিয়া চক্রে ঢুকে এই এজেন্সি একাই ছাড়পত্র নিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ কর্মীর।
ওই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঐশী ইন্টারন্যাশনাল এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল। পঞ্চম অবস্থান রয়েছে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠান আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খোলার আগে মাত্র ২৩৮ কর্মীকে বিদেশে পাঠালেও এই চক্রে ঢুকে তারা শীর্ষ তালিকায় চলে যায়। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৭ হাজার ৮৪৯ কর্মী। চক্র গঠনের সময় বেনজীর ছিলেন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সভাপতি।