

করোনার পরবর্তী সময়ে মূল্যস্ফীতির চাপে ২০২২ সালে বাংলাদেশে গরিব মানুষের সংখ্যা আরও অন্তত ২৭ লাখ ৫১ হাজার বেড়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি ঢাকায় বিআইডিএস সম্মেলনে ভার্চুয়াল বক্তব্যে আইএফপিআরআইয়ের ফোরসাইট অ্যান্ড পলিসি মডেলিং ইউনিটের জ্যেষ্ঠ গবেষক আঙ্গা প্রদেশা বলেন, ‘করোনা ছিল বাংলাদেশের উচ্চ দারিদ্র্যের মূল কারণ। কিন্তু, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে।’
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দায় বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে উল্লেখ করে গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে থাকেন।
গবেষণায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশ যখন ক্রমবর্ধমান খাদ্যমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে, তখন দেশের নানা এলাকায় সরকারের ভর্তুকি দামে খাদ্যপণ্য কিনতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, গত আগস্টে দেশে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০১১ সালের অক্টোবরের পর এটি সর্বোচ্চ। গত নভেম্বরে দেশে খাদ্যমূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশে।
বাংলাদেশে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এই আইএফপিআরআই কর্মকর্তা সেকেন্ডারি ডেটা ব্যবহার করে করোনা ও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মূল্যসহ ২০২০ সাল থেকে বড় বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব তুলে ধরেছেন।
তার মতে, ‘করোনা মহামারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির প্রবণতাকে বদলে দিয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি ধীর হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার আরও দেরি হতে পারে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ কম খরচ করছেন।
২০২২ সালে এই পরিস্থিতি গবেষণায় নেওয়া ১৭ দেশের অপুষ্টির চিত্রকে আরও খারাপ করে তুলেছে। এসব দেশের তালিকায় আছে—বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া ও নেপাল।
গবেষক আঙ্গা প্রদেশা বলেন, ‘বিশ্বে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি জিডিপির তুলনায় ক্ষুধার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। করোনার কারণে মানুষের আয় কমে গেছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পরিবারগুলোর খাবার কমিয়ে দিয়েছে।’