গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণহত্যার বিষয়ে আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
শুনানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে আদালত বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন- সরকার ক্ষতিপূরণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকারের পলিসি ডিসিশনে আদালতের হস্তক্ষেপ উচিত নয়। পলিসি ডিসিশনে (কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়) হস্তক্ষেপ করার কারণে কতকিছু হয়ে গেল।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের সময় বাড়িতে, বাড়ির আঙিনায় ও পরিবারের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গুলিতে নিহত ১০ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে আদালত এমন মন্তব্য করেন।
বাড়িতে, বাড়ির আঙিনায় ও পরিবারের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গুলিতে শিশুদের মৃত্যুর কারণ ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে গত ৩১ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকার রিটটি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব। বুধবার শুনানি নিয়ে আদালত বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন রাখেন।
শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী তৈমুর আলম খোন্দকার নিহত শিশুদের পরিবারকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানান। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, দিলে কত টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবেন, এ বিষয়ে দ্রুতই সরকার পলিসি ডিসিশন নেবেন। পলিসি ডিসিশন নেওয়া না পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখার আর্জি জানান তিনি।
এ সময় হাইকোর্ট রিটকারী আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, সবে তো সরকার গঠন হলো। আপনি নিজেও তো এই সরকারের সফলতা চান। কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। অ্যাটর্নি জেনারেল তো বলছেন সরকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের পলিসি ডিসিশনে আদালতের নাক গলানো উচিত নয়। দেখেছেন তো পলিসি ডিসিশনে (কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়) হস্তক্ষেপ করার কারণে কতকিছু হয়ে গেল। শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এই রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
আন্দোলনে নিহতদের ঘটনায় দায়ীদের বিচার করতে হাইকোর্টের রুল: অতি সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সাধারণ জনগণের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচারের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে সুপ্রিমকোর্টের এক আইনজীবীর দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদোয়ান আহমেদ রানজীব। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসককে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে রিটটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
পরে আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, অতি সাম্প্রতিককালে ছাত্র-জনতার ওপরে যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল সেই সব হত্যাকারী, তাদের সহযোগী এবং মদদ দাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য জনস্বার্থে রিট করেছি। আদালত রুলে অতি সাম্প্রতিককালে সাধারণ জনগণের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া গঠনে বিবাদীদেরকে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন। একইসঙ্গে আদালত একটি মতামত দিয়েছেন। সেটি হলো, আমাকে অর্থাৎ আবেদনকারীকে দায়ীদের বিরুদ্ধে যেকোনো যথাযথ ফোরামে ফৌজদারি মামলা করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।