ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসের ২৫ তারিখ শেষে যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে খাতটিতে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে এসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিবর্তে পরিশোধ করেছে সরকার।

সরকারের সুদ ব্যয় কমাতে নানা কড়াকড়ির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমানো হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করেছে ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নিয়েছে।

ব্যাংকারেরা জানান, দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। এর কারণে অনেক ব্যাংক তাদের চাহিদা মেটাতে অন্যদের কাছ থেকে ধার করছে চলছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও বড় অঙ্কের ধার দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করতে পারছে না। একইসঙ্গে আমানতের পরিমাণও আগের তুলনায় কমছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতেও ব্যাপক পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে চলতি বছরের জুন শেষে সেই ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর ২৫ সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

অন্যদিকে জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। এরপরে ২৫ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।

সবমিলিয়ে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জুন শেষে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে মোট ঋণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ পর্যন্ত সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ব্যাংক, ডাকঘর ও সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে গ্রাহকরা বিভিন্ন স্কিমে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। একই সময়ে মূল সঞ্চয়পত্রের অর্থ ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ফলে জুলাই শেষে এ খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় খাতটিতে বিক্রি বেড়েছে।

তবে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে।

এদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছিল সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে। সরকার এ খাতে সুদ ব্যয় কমাতে এমন কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। আগের অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...