আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী সময়মতো মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেননি, সেসব প্রার্থীর রিট আবেদন খারিজ করেছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. ইকবাল কবীর ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর না থাকা, ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে রিটের শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করা হয়েছে।
রিট আবেদনকারী প্রার্থী হলেন- স্বপন কুমার সরকার, রাজবাড়ী সদর। সুব্রত চন্দ্র সরকার, নেত্রকোনা-২। খন্দকার আহসান হাবিব, টাঙ্গাইল সদর। জয়নাল আবেদীন, নারায়ণগঞ্জ সদর। মুহম্মদ খাইরুল বাশার লাভলু, নরসিংদী-৫। মো. মোস্তফা জামাল, ঢাকা-১৫। সুলতান মাহমুদ, জয়পুরহাট। জাকির হোসেন, সিলেট-৩। মো. শামীম মিয়া, নেত্রকোনা-৫। নূর মোহাম্মদ মিয়া, শরীয়তপুর-৩। মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, নরসিংদী-৫। সোহেল রানা, সাভার।
এছাড়া জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টি, মুন্সিগঞ্জ-২। মো. ইউসুফ পারভেজ, বিএনআরপি, ঝিনাইদহ সদর। নুরুল আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, কক্সবাজার-৩। চৌধুরী এবাত নুর, কক্সবাজার-১। নুরুল করিম আফসার, চট্টগ্রাম- ৬। এস এম আশিক বিল্লাহ, ঢাকা-১০। সালমা আক্তার শিল্পী, পটুয়াখালী-৩। প্রফেসর আবু সাঈদ, পাবনা-১। মীর এনায়েত হোসেন মন্টু, টাঙ্গাইল-৭। হোসাই মোহাম্মদ ইসলাম, যশোর-৬। এস এম এনায়েত করিম, পটুয়াখালী-২। মো. শাহানাজ ব্যপারী, চাঁদপুর-৫, রিট আবেদন করেন
এর আগে মঙ্গলবার ১২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি সংক্রান্ত বিষয়াদিসহ জরুরি রিটের শুনানি গ্রহণ করতে হাইকোর্ট বিভাগে দুটি বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ দুই বেঞ্চকে এ সংক্রান্ত রিট শুনানির এখতিয়ার দিয়ে প্রধান বিচারপতির আদেশও জারি করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল এবং আপিল নামঞ্জুর করা হয়েছে ওইসব প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করে প্রতিকার চেয়ে থাকেন। মূলত ওইসব রিটের শুনানি হবে এ দুই বেঞ্চে। বেঞ্চগুলো হলো-বিচারপতি আবু তাহের মো.সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো.বশির উল্লাহর বেঞ্চ এবং বিচারপতি মো.ইকবাল কবির ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন সময়েও মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (১ জানুয়ারি) পর্যন্ত এ দুই বেঞ্চ নির্বাচন সংক্রান্ত রিটের শুনানি গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির পৃথক আদেশ জারি করা হয়।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ৭ জানুয়ারি।
এর মধ্যে রোববার (১০ ডিসেম্বর) প্রথম দিনে ৯৪টি আপিল আবেদনের শুনানি হয়। এতে ৫৬ জনের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। ৩২ জনের আবেদন নামঞ্জুর হয় এবং ছয়টি আপিলের রায় পেন্ডিং রাখা হয়। আর চারটি আপিলের বাদী অনুপস্থিত ছিলেন।সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ৯৯ জনের আপিল আবেদনের শুনানি হয়। এতে ৫১ জন তাদের প্রার্থিতা ফেরত পান। ৪১ জনের আবেদন নামঞ্জুর হয়। আর আটটি আবেদনের সিদ্ধান্ত হয়নি। মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) তৃতীয় দিনে ৯৮ জনের আপিল শুনানি হয়েছে। এতে ৬১ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আপিল আবেদন নামঞ্জুর হয়েছে ৩৫ জনের। আর দুটি আবেদনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সারা দেশে প্রার্থীদের জমা দেয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১৯৮৫ জন প্রার্থী বৈধ ও ৭৩১ জন প্রার্থী অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি (রোববার)।
ইসি সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো যে কয়টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তা হলো; আওয়ামী লীগ ২৯৮টি (পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা দেয় দলটি), জাতীয় পার্টি ২৮৬টি (১৮টি আসনে দুইটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছে দলটি), তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, জাসদ ৯১টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, জাকের পার্টি ২১৮টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ৩৯টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ৩৪টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৭টি, গণফ্রন্ট ২৫টি, গণফোরাম ৯টি ও জমিয়তে ইসলাম বাংলাদেশ ১টি।
আরও রয়েছে, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১৪২টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ১৩টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ৪৭টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ০৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, বাংলাদেশ ন্যশনাল আওয়ামী পার্টি ৬টি, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১৪টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১৩টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৮টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ১টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ বিএমএল ৫টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ ৫৫টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম ৪৯টি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২। এছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৭৪৭ জন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। আর ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি।