শেষ সময়েকর আয়কর রিটার্ন জমা দেয়ার হিড়িক পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ততা বেড়েছে কর অঞ্চলগুলোয়। চাপ সামলাতে যেন হিমশিম খাচ্ছে আয়কর সংক্রান্ত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। রাজধানীসহ সারা দেশে করদাতাদের পদচারণায় মুখর কর অঞ্চলগুলো। নভেম্বরজুড়ে বিশেষ এ সেবার আয়োজন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যেখানে এক ছাদের নিচেই মিলছে রিটার্ন দাখিলের সব সেবা।
যদিও শুরুর দিকে রিটার্ন জমায় ছিল ধীরগতি। করদাতারা জানান, নতুন আয়কর আইন বুঝতেও অসুবিধা হচ্ছিল। এর মধ্যে হরতাল-অবরোধের কারণে রিটার্ন জমা দিতে কখন আসবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন তারা।
এক করদাতা জানান, আগে যে হয়রানি ছিল, এখন সেটি অনেকখানিই কমেছে। এখন অনেক সহজ হয়েছে। আগের রিটার্ন দেয়ার জন্য লাইন ধরতে হতো। সেটি খুবই কষ্টকর ছিল। সে তুলনায় এখন অনেক সহজ।
শেষের দিকে করদাতাদের ভিড় বাড়ায় সব কর অঞ্চলেই ব্যস্ততা বেড়েছে। আয়কর সংক্রান্ত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাষ্য: ‘আমরা বেশি সম্ভব সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। শেষ মুহূর্তে আমরা চাপে থাকি। তারপরও শেষ করতে হয়। আবার হয় তো মেয়াদকাল বাড়ানো হয়। তাছাড়া আর মাত্র ৬ কার্যদিবস বাকি। এর মধ্যেই আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে।’
এনবিআরের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত করদাতা ৯০ লাখের বেশি। মাসব্যাপী বিশেষ এ উদ্যোগে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার, যা থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা।
এদিকে, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই)। এনবিআরকে একই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরাও।
এ বিষয়ে ট্যাক্স, ভ্যাট অ্যান্ড কোম্পানি ল’ এডভাইজার মো. লোকমান হোসাইন বলেন, রিটার্ন জমাদানের প্রচারণা হয় মূলত নভেম্বর মাসে। এটি জুলাই থেকে শুরু করা দরকার। তাছাড়া তাড়াহুড়ো করে কাজ করতে গেলে ভুলও হয়। আর যদি ভুল হয় পরবর্তীতে ফাইল অডিটে দেয়া হয়। এতে করদাতা হয়রানির শিকার হন এবং সরকারও রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়।
ট্যাক্স অ্যান্ড কোম্পানি কনসালট্যান্ট পিএস চক্তবর্তী পার্থ বলেন, ‘ট্যাক্সেশনকে একটি প্রেশারের জায়গায় এমনভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যে কারণে মানুষের মধ্যে ট্যাক্স দেয়ার ইচ্ছা যতটা আছে, সাড়া দেয়ার প্রবৃত্তি ততটা নেই। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ যদি সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করে, তাহলে মানুষের আরও সাড়া পাওয়া যাবে।’
এনবিআরের তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে আয় হয়েছে ৩০ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১৩.৮৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। খবর সময় টিভি।