জানুয়ারি ২৮, ২০২৫

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বেলেছেন, রাজস্ব আয় যেন যৌক্তিক হয় এবং পাশপাশি ব্যয়টাও যেন যৌক্তিক হয়। আমরা সেদিকে জোর দিচ্ছি।

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান ও অর্থ সচিব ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কাস্টমসকে রাজস্ব আহরণে সহযোগিতা করতে হবে। জোর করে যাতে টাকা আদায় না করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখাতে হবে। রাজস্ব আহরণ ব্যয় যেন যোক্তিক হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কাস্টমসকে রাজস্ব আহরণে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। জোর করে টাকা পয়সা আদায় করবেন না। দেনা আদায়ের ক্ষেত্রে কোন রকম বেআইনি ও অযৌক্তিক কোন চাহিদা করা হবে না। এমনকি অফিসের টেবিলের নীচে অযৌক্তিক কোন চাহিদা করা হবে না। তাই আমি আশা করি ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবেন। রাজস্ব বোর্ড যে শুধু সুযোগ-সুবিধা দেবে বিষয়টি এমন না। আর ব্যবসায়ীদের নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের ব্যবস্থাপনা মোটামুটি এগিয়ে আছে। তবে এখনো প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তির দিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে আছি, এসব বিষয় টের পাওয়া যাচ্ছে। এখন সময় বেশি নেই। আমাদেরকে আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে হবে।

তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ তথ্যের ক্ষেত্রে অনেক স্মার্ট। রাজস্ব আদায় ও ব্যয়- দুইটিই সমভাবে করতে হবে। শুধু আদায় করে যাব আর নির্বিচারে ব্যয় করা যাবে না। রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় যেন যোক্তিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এটাই মনে হয় সবাই আশা করেন। ব্যবসায়ীরা চান সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিলে ব্যবসার পরিবেশ সহজ করবে। তবে এখানেই আমরা দেখতে পারি অনেক সময় ঘাটতি থাকে।

উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমরা সকলে সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। এই রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, ইলেকশন সংস্কার। তবে আমি মনে করি এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সংস্কার। আইন-কানুনের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সিস্টেম আছে কিন্তু আমরা ঠিক মত ব্যবহার করতে পারছি না।

সরকার সিস্টেম ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের একটু পজিটিভ স্ট্যান্ড চাই। সব জিনিসের দাম একত্রে কমবে না, আবার একত্রে বাড়বে এমনটাও না। তবে জনগণের কষ্ট হচ্ছে এটা ঠিক।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এখন থেকে সারাবছর অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। তবে ৩১ জানুয়ারির পরে রিটার্ন জমা দিলে বকেয়া আয়করের ওপর ২ শতাংশ হারে জরিমানা গুণতে হবে। অনলাইন ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট বন্ধ হবে না। ৩৬৫ দিনই লোকজন দিতে পারবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যারা ট্যাক্স রিটার্ন দেবেন, তাদের ট্যাক্স ক্যালকুলেশন এক রকম হবে। এরপর যারা দেবেন, তারাও অনলাইনে দিতে পারবেন, তাদের অটোমেটিক্যালি এক্সট্রা বার্ডেন চলে আসবে। সেটা কত বলে দেই, যে ট্যাক্স বাকি থাকবে, সেটার ওপর প্রতি মাসে ২ শতাংশ। ম্যাক্সিমাম সিলিং ২৪ মাস। আমরা ৪৮ শতাংশের বেশি কারো কাছ থেকে ইন্টারেস্ট নেব না।

তিনি আরো বলেন, অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার হালনাগাদ তথ্য তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান। আজকে পর্যন্ত অনলাইন রিটার্ন ১২ লাখ হয়ে। আশা করছি, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এটা ১৪ লাখের কাছাকাছি যাবে।

আব্দুর রহমান খান বলেন, আমরা এখন কাস্টমসকে ব্যবহার করছি ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের যন্ত্র হিসেবে। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশের রাজস্বের প্রধান উৎস ছিল কাস্টমস। তখন আয়কর দেওয়ার মতো জনশক্তি ছিল। ভ্যাট ছিল না। তখন কেবল কাস্টমস থেকে রাজস্ব পেতাম। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে মিডল ক্লাস, আপার মিডল ক্লাস, রিচ পিপুল গ্রুপ তৈরি হয়েছে। ধীরে ধীরে আয়কর আদায় বেড়েছে। আমরা ভ্যাট চালু করেছি। সেখান থেকেও বড় একটা রাজস্ব আসছে। এখনো আমাদের দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব পরোক্ষ কর থেকে আসে। এর মানে এই নয় যে, কাস্টমসের গুরুত্ব কমে গেছে। দেশের নিরাপত্তা ও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের জন্য কাস্টমসের গুরুত্ব একই রকম রয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, কাস্টমসে ট্যাক্স আরোপ করি, মূল উদ্দেশ্য রাজস্ব আহরণ নয়। আমার লোকাল ইন্ডাস্ট্রিকে গ্রো করতে চাই৷ বাইরের কম্পিটিটরকে নেগোসিয়েট না করলে লোকাল ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করবে না। আমাদের দেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অনেক কিছু আমদানি রোধ করতে হয়। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাস্টমসকে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বন্ডের বিষয়ে অভিযোগ শুনি, সেটাও আমরা অটোমেশনের মধ্যে এনেছি। কার্যক্রম শুরু করতাম, তবে ব্যবসায়ী বন্ধুদের অনুরোধ ১ মাস পিছিয়েছি। আমরা আশা করি, সামনে মাস থেকে অপারেশন শুরু করতে পারব।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...