

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রয়োজন-ভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাধারণভাবে জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রভূত অবদান রেখেছে। বগুড়া, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ‘বাঙালি-করোতোয়া-ফুলঝোর-হুরাসাগর নদী ব্যবস্থায়’ মোট ২১৭ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং বা পুনঃখননের আওতায় আনা হয়েছে।
বিডব্লিউডিবির প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার নদী বাঁধ রক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলার করতোয়া ও ফুলঝোর নদীর ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার তীরবর্তী এলাকা রক্ষা করা হয়েছে। ২,৩৩৫.৬০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি নদী ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার খুদবান্দি, শিঙ্গাবাড়ী ও সুভাগা এলাকাকে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ৪৬৫.৪৬ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ১৮ কিলোমিটার ড্রেজিং, ৪০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনরূদ্ধার এবং চার কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষাসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল রক্ষার জন্য সিরাজগঞ্জ জেলায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যমুনা নদী থেকে প্রায় ৪.৬৮ বর্গকিলোমিটার পুনরুদ্ধার করা জমি উঁচু করা হয়েছে। ৫০৯.৯৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অংশ হিসাবে, ৩.২০ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, নওগাঁ জেলার শাপাহার ও পোরশা উপজেলায় ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জল পয়ঃনিষ্কাশন ও জলসেচন’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৪১.৯৬ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ৭.৯৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ১৪-ভেন্ট রেগুলেটর এবং ১০ ইনলেট নির্মাণ, ১৪ কিলোমিটার বাঁধ পুনরুদ্ধার, ১৪ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন এবং ০.৮-কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড সুরক্ষার মতো বহুমাত্রিক কাজ বাস্তবায়নের বিধান রয়েছে।
আত্রাই ও নগর নদীর ভাঙন থেকে নাটোর জেলার শিংড়া পৌরসভার এলাকা রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪১.৯৯ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ১.৭০৮ কিলোমিটার নদীর বাঁধ রক্ষা এবং ৯৬ কিলোমিটার নদী পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রাজশাহী শহরের পাঁচ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করার জন্য ২৬৮.১৭ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় ৪.৯০৫ কিলোমিটার নদী বাঁধ সুরক্ষা এবং তিনটি কুঁচকি/স্পার্স পুনর্বাসনের কাজ সম্পাদিত হয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পদ্মা নদীর তীর নতুন রূপ লাভ করেছে। পুরো এলাকা বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে। বিডব্লিউডিবি রাজশাহীতে পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে প্রায় ৩,২৩১.৩৩ কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ রক্ষার জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ‘রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ভাঙন থেকে পদ্মা নদীর বাম তীর বরাবর স্থাপনা রক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৬১৬.৮০ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার বাসসের সাথে আলাপকালে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৩৫৪.১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ৫ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় নদী বাঁধ রক্ষার কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৬২.৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর জলস্রোতকে মধ্যবর্তী অংশে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি এর নাব্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য ১২.১০ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিংয়ের কাজও বাস্তবায়ন করছি।’ ক্রসবারগুলো ড্রেজ করা বালি দিয়ে তৈরি করা হবে যা ক্রসবারগুলোর মধ্যে ১২০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করার সুযোগ তৈরি করবে। ক্রসবারে গাছ লাগানো হবে যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব কমানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে দেশের সর্ববৃহৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার দশম রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হচ্ছে। বাঁধটির সফল বাস্তবায়নের পর নদীর উভয় তীরে প্রায় ৮,০০০ হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫৫.৮৩ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন জাতের ফসল এবং ২২.৩৭ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন হবে। নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকার অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা প্রায় ২৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটির লক্ষ্য। খবর বাসস।