নভেম্বর ২৪, ২০২৪

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। এ ঘটনার জেরে রাঙ্গামাটিতেও সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। আজ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।

মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ মামুন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পাহাড়ি এলাকা। বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় স্থানীয় দুপক্ষ।

ওইদিন বিকেল ও রাতে দীঘিনালা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা মিছিল নিয়ে লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেয় আরেকপক্ষ। এরই জেরে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ধনরঞ্জন ত্রিপুরা, রুবেল ত্রিপুরা ও জুরান চাকমা নামে তিন যুবক নিহত হন। আহত হন আরো অন্তত ২০ জন।

আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক যুবক বলেন, ‌‘একজনকে আটকে রেখেছি। আমরা যখন তাকে আনতে যাই তখন আমাদের ওপর গুলি চালায়।’

খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, হাসপাতালে ১২ জন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে ৩ জন এখানে এসে মারা গেছেন। বর্তমানে নয়জন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরে চারজনকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছিল। তারা সেখানে চিকিৎসাধীন।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

শুক্রবার সকালে সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাবাহিনীর দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সংঘর্ষের সূত্রপাত উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের আশ্বাস দেন তারা। পাশাপাশি পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী তৎপর বলেও জানান তারা।

সেনাবাহিনীর দীঘিনালা সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওমর বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ সার্বক্ষণিকভাবে টহল জারি রেখেছি।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহীদুজ্জামান বলেন, তারা কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করা হবে। একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্য জেলায় যাতে উত্তেজনা না ছড়ায় সেজন্যও আমরা কাজ করছি।

এদিকে, খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। যা রূপ নেয় সংঘর্ষে। সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামে একটি সংগঠন মিছিল নিয়ে বনরুপা এলাকায় যায়। এ সময় মিছিলে ঢিল ছোড়ার অভিযোগ করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা। হামলার খবর পেয়ে অপর পক্ষ তাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। আগুন দেয়া হয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। দুপুরের দিকে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

এদিকে বান্দরবানেও বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে পাহাড়ের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। রাজারমাঠ থেকে সম্মিলিত ছাত্র সমাজের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। ব্যানার ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে হাজারো শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...