

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে অটোচালক মানিক মিয়া নিহতের ঘটনায় এক মাস পর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার মা নুরজাহান বেগম। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামানসহ ১১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রংপুর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ বাবুর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি। বিকেলে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ ঘটনায় পুলিশের করা পূর্বের মামলা প্রত্যাহারের দিন থেকে মামলাটি এজহার হিসেবে গ্রহণ করে কার্যক্রম শুরুর আদেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলাউদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওইদিন পুলিশসহ আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মীদের এলোপাথাড়ি গুলিতে নিহত হন অটোচালক মানিক মিয়া। ঘটনাটি আড়াল করতে দায় ছাত্র-জনতার ওপর চাপিয়ে দিতে পুলিশ একটি মামলা করে।
শেখ হাসিনা সরকার থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা ৩১ আগস্ট এর মধ্যে প্রত্যাহার ও নিষ্পত্তির প্রজ্ঞাপন জারি করে।
এই আইনজীবী আরও জানান, নিয়ম অনুযায়ী ৩১ আগস্ট পুলিশের করা ওই মামলাটি প্রত্যাহার হয়ে গেলে এক ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাদী নুরজাহান বেগমের মামলাটির কার্যক্রম শুরু হবে।
আইনজীবী আলাউদ্দিন জানান, মানিক হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
এদিকে অন্য মামলার আসামিরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকার, সাবেক এমপি নাছিমা জামান ববি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষের ছেলে রাশেক রহমান, রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার উৎপল রায়, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, তাজহাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমাদ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ও সাময়িক বরখাস্ত সিটি কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু, ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রামাণিক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন.
মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে মহানগর যুবলীগের সভাপতি সিরাজুম মুনির বাশার, সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এপিএস কামরুজ্জামান তুহিন, জেলা যুবলীগ সভাপতি লক্ষ্মীন চন্দ্র দাস, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকিমুল ইসলাম, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাফিউর রহমান রাফি, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেকসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাসহ ১১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ, আব্দুল্লাহ আল তাহির ও ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদসহ ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৩৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।