ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন বিক্ষোভ দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে আরও ২০টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক হারে ধরপাকড় চালাচ্ছে। এক দিনে আরও ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও রয়েছেন। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, গ্রেপ্তার অভিযানে তারা পিছু হটবেন না। দাবি আদায়ে ত্যাগ স্বীকারে তারা প্রস্তুত। বিক্ষোভের মুখে একটি অনুষ্ঠানে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।

বিক্ষোভকারীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানি এবং ব্যক্তিদের বয়কট করার দাবি করছেন। সিএনএন জানায়, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থামার সামান্য লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

শুক্রবার এনবিসি টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪০টির বেশি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অধিকাংশ বিক্ষোভই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হচ্ছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ষাটের দশকের শেষের দিকে ভিয়েতনামে আমেরিকার আগ্রাসনবিরোধী ছাত্র বিক্ষোভের পর সম্ভবত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে এবার।

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, স্থানীয় সময় শনিবার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ দমনের জন্য দুই শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি এবং সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে তাঁবু গেড়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া আন্দোলন দমনে এখন পর্যন্ত ৭০০-এর বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের বেশির ভাগকেই পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বলেছেন, শনিবার একটি বিক্ষোভ চলাকালে ৮০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ‘অননুমোদিত ক্যাম্প’ স্থাপন করায় ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে ১৫ জন ছাত্র। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনে প্রতিবাদী ক্যাম্প গড়ে তোলার পর পুলিশ অন্তত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। বোস্টনে নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ‘অননুমোদিত ছাউনি’ পরিষ্কার করার সময় পুলিশ প্রায় ১০০ জনকে আটক করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসের বাসিন্দা ছাড়া অন্যদের প্রবেশ অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী গ্রেপ্তার

গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জিল স্টেইনকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ থেকে শনিবার গ্রেপ্তার করা হয়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্প স্থাপন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। গ্রেপ্তারের আগে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছেন, তিনি ছাত্রদের সমর্থনে এবং সংবিধানে দেওয়া বাকস্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

স্টেইন বলেন, ‘আমরা এখানে সেই ছাত্রদের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে যাচ্ছি, যারা গণতন্ত্রের জন্য দাঁড়িয়েছে; মানবাধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছে; গণহত্যা বন্ধ করতে দাঁড়িয়েছে।’

এদিকে খ্যাতনামা মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেছেন, মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ইহুদি বিদ্বেষপ্রসূত নয়। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ইসরায়েলি সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য করা গুরুত্বপূর্ণ। সিএনএনকে স্যান্ডার্স বলেন, আমেরিকার অধিকাংশ জনগণ গাজায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ মেশিনের ওপর বিরক্ত। তারা ইসরায়েলে আর সাহায্য পাঠাতে চায় না।

বাইডেনের অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভ

প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবার রাতে বার্ষিক হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডিনারে গিয়ে বিক্ষোভের মুখোমুখি হন। ব্যানারধারী বিক্ষোভকারীরা বার্ষিক সমাবেশের স্থান ওয়াশিংটন হিলটনের বাইরে গাজায় সাংবাদিকদের মৃত্যুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। শত শত বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের ওই অনুষ্ঠান বয়কটে উৎসাহিত করতে এ আয়োজন করেন। এ অবস্থায় বাইডেন পেছনের প্রবেশদ্বার দিয়ে হোটেলে পৌঁছেন বলে জানায় রয়টার্স।

বিক্ষোভকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা গাজা শিক্ষার্থীদের

যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি ছাত্ররা রোববার দক্ষিণ গাজায় সংহতি সমাবেশ করেছে। রাফাহর শাবোরা শরণার্থী শিবিরে শিশুরা একটি ব্যানার বহন করে, যাতে লেখা ছিল– ‘কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশেই থেকো’ এবং ‘আমাদের শিক্ষা ও জীবনের অধিকার লঙ্ঘন একটি যুদ্ধাপরাধ।’

ফিলিস্তিনি শিশুরা তাঁবুর কাপড়ে মার্কিন বিক্ষোভকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার বার্তা লিখেছে এভাবে– ‘গাজার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ। আপনাদের বার্তা আমাদের কাছে

পৌঁছে গেছে।’

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...