পুলিশের নিপীড়নের মধ্যেই গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল রয়েছে। সপ্তাহজুড়েই শিক্ষার্থীদের দমন করার জন্য বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছে। এতে গ্রেফতার হয়েছেন শত শত শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়েছেন। খবর এএফপি, আলজাজিরার।
ইসরাইলের হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরু করা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তাদের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁবু বহাল থাকবে এবং বিক্ষোভ চলবে। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় পরিকল্পিত স্নাতক অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে এখন তারা সমাধানের পথ খুঁজতে বাধ্য হবেন। কলাম্বিয়ার মতো একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া এবং ম্যাসাচুসেটস।
এদিকে বিক্ষোভের লাগাম টেনে ধরতে কলেজ প্রশাসকদের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছেন আইনপ্রণেতারা। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের বিষয়ে শুক্রবার রাতে সিনেটে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এ প্রস্তাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি টাস্কফোর্স গঠনের কথাও বলা হয়েছে।
কলাম্বিয়ার মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেছেন, সিনেটের মতো বিশ্ববিদ্যায়ল প্রশাসনও ক্যাম্পাসে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করতে চায়। সেই সঙ্গে চলমান সংলাপের প্রতিও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঢেউ এরই মধ্যে ইয়েল, এমআইটি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর মধ্যে জর্জিয়ার আটালান্টার এমোরি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। এমনকি সেখানে এক নারী অধ্যাপককে গায়ের জোরে মাটিতে ঠেসে ধরে পুলিশের হাতকড়া পরানোর দৃশ্য রীতিমতো ভাইরাল হয়েছে।
সিএনএনের ভিডিওতে দেখা গেছে, এমোরি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফোলিন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে এক পুলিশ কর্মকর্তা তার ওপর চড়াও হন এবং চোখের পলকেই তাকে মাটিতে শুইয়ে হাতকড়া পরান।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, একপর্যায়ে অপর এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে অধ্যাপক ফোলিনকে চেপে ধরে তার বুকের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাত বের করে এনে দুই হাতই পিছমোড়া করেন এবং হাতকড়া পরিয়ে দেন।
এছাড়া অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শুক্রবার ‘অননুমোদিত ক্যাম্প স্থাপনে’ জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। বার্নার্ড কলেজ স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, কলাম্বিয়ার ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়ায় ‘প্রায় সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন বরখাস্ত করার’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভার, কমিউনিটি কলেজ অব ডেনভার এবং মেট্রোপলিটন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের যৌথ ক্যাম্পাস থেকে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনকারী ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকেই শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জানিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন, তবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হবে। ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটিতে নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় বৃহস্পতিবার রাতে ৩৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্যারিসের প্রখ্যাত সায়েন্স পো ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীদের ইসরাইলপন্থি শিক্ষার্থীরা সামনাসামনি চ্যালেঞ্জ জানান। পুলিশ দুই পক্ষকে পরে আলাদা করে দেয়। ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা পরে তাদের কর্মসূচি স্থগিত করে।