

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পদে পদে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) প্রকাশ না করা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চিঠির জবাব না দেয়া এবং আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করাসহ কোম্পানিটির নানা অনিয়মের বিষয় বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলাম মেঘনা পেটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জাকরিয়াসহ ৫ জনকে সাড়ে তিন কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়ে একটি আদেশ জারি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, মেঘনা পেটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জাকারিয়া এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এফ কামালকে এক কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও তিন পরিচালককে ৫০ লাখ টাকা করে আরও দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। তারা হলেন, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. ওয়ালী উল্যাহ, আবু তাহের এবং কবির আহমেদ।
জানা গেছে, ২০০৪ সাল থেকে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি মূল্য সংবেদনশীল (পিএসআই) হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়াও ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানির কারখানা এবং উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে নিজেদের সরঞ্জাম, প্ল্যান্ট কিংবা সম্পদের কোনো মূল্যায়ন করেনি কোম্পানিটি। অথচ ২০২১ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি ৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছে। বিএসইসি মনে করছে, কোনো নিরীক্ষা ছাড়াই সম্পদমূল্য নিয়ে অসত্য তথ্য উপস্থাপন করেছে মেঘনা পেট। ফলে বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে বলে ধারণা সংস্থাটির। এছাড়াও দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের স্টোর ও স্টকস সম্পর্কে বিএসইসির তদন্ত কমিটিকে সঠিক প্রতিবেদন দিতে পারেনি কোম্পানিটি।
সূত্র জানায়, মেঘনা পেটের ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার অনিরাপদ ঋণ এবং এক কোটি ৯৭ লাখ টাকার এফডিআর সম্পর্কে বিএসইসির তদন্ত কমিটি জানতে চাইলেও কোম্পানিটি কোনো ব্যাংক ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি। বিএসইসি বলছে, কোম্পানিটির এই অনিরাপদ ঋণ এবং এফডিআরে বিনিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও এ বিষয়েও বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে বলে মনে করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
জানা গেছে, বিএসইসির তদন্ত কমিটিকে মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ অবণ্টিত লভ্যাংশেরও কোনো হিসাব দিতে পারেনি। অবণ্টিত লভ্যাংশ ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা মানেনি প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র আরও জানায়, বিএসইসির আদেশের তোয়াক্কা না করে একই ব্যক্তি একাধিক কোম্পানির ব্যবস্থা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি এম. এফ কামাল একইসঙ্গে মেঘনা কনডেন্সড মিল্কেরও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন। এছাড়াও কোম্পানির সচিবও একসঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএসইসি মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের নমিনেশন অ্যান্ড রেমুনারেশন কমিটির (এনআরসি) গঠনতন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি। কোম্পানির কোনো নীতিমালাও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়াও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দেয়া চিঠির জবাবও দেয়নি মেঘনা পেট।
এসব অভিযোগ নিয়ে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি শুনানি করে বিএসইসি। শুনানিতে অংশ নিয়ে মেঘনা পেটের পরিচালক আলমগীর হোসেন এবং কোম্পানি সচিব মো. আশরাফ আলী কোম্পানির পক্ষে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। তবে বিএসইসি তাদের বক্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানসহ পাঁচ জনকে সাড়ে তিন কোটি টাকার অর্থদণ্ড প্রদান করে।
জানা গেছে, আদেশের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। অন্যথায় প্রতিদিনের জন্য নতুন করে প্রত্যেককে আরও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা গুণতে হবে বলে কমিশনের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।