বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। এখানে ১৪২ কোটি মানুষের বাস। ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম। সামরিক দিক দিয়েও অন্যতম সুপার পাওয়ার এ দেশ। এর অন্য নাম হচ্ছে ইন্ডিয়া (India)। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটি মূলত: এ নামেই পরিচিত। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা, বৈশ্বিক দলিলপত্র, মানচিত্র-সব কিছুতে ইন্ডিয়া নামটিই ব্যবহৃত হয়েছে। এমনকি ভারত সরকারের তৈরি করা মানচিত্রেও এটিকে ইন্ডিয়া হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। এই ইন্ডিয়া নামটির সাথে মিল রেখে করা হয়েছে আরও অন্য অনেক নামকরণ। দেশটির সরকারের ওয়েবসাইটের এড্রেসেও ইন্ডিয়া শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে (www.india.gov.in)।
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর সরকার হঠাৎ করে দেশের ইন্ডিয়া নামটি বাদ দেওয়ার তোড়জোর চালাচ্ছে বলে দেশটিতে জোর জল্পনা চলছে। এতে হাওয়া দিয়েছে চলতি মাসে অনুষ্ঠেয় জি২০ বৈঠককে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে পাঠানো একটি নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্র। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি২০ সমাবেশে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’ কথাটি লেখা আছে। বিদেশি অতিথিদের দেওয়া আমন্ত্রণপত্রে অতীতে কখনোই এমনটি লেখা হয়নি। সবসময় লেখা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’।
ওই আমন্ত্রণপত্রের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার?এই বিষয় নিয়েই বিজেপিকে তুমুল আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) রমেশের কটাক্ষ, ‘‘তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’, অথচ চিরাচরিত ভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ লেখাই দস্তুর।’’
কংগ্রেসের এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। তা হল, সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি দেশের নাম ইন্ডিয়া থেকে সব ভাষাতেই ভারত করার প্রস্তাব আনতে চলেছে মোদী সরকার? বিশেষ অধিবেশন কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছেই। অনেকের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকেরই আবার দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকারের মুখে কুলুপ।
প্রসঙ্গত, বিজেপি বিরোধী দলগুলি যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পটনা, তার পর বেঙ্গালুরু হয়ে ইন্ডিয়ার নেতারা সম্প্রতি মুম্বইয়েও মিলিত হয়ে বিশদে আলোচনা সেরেছেন। তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটিও। আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া মোদীর বিজেপিকে কড়া টক্করের মুখে ফেলতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধী নেতাদের। চুপ নেই বিজেপিও। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিক বার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির তাবড় নেতারাও। এ বার কি সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধুমাত্র ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদী সরকার? জল্পনা বাড়ছে।
বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণ আর ভারতের ‘ইন্ডিয়া’ নাম বাতিল করার আলোচনা প্রায় কাছাকাছি সময়ে হয়েছে। যদিও বিষয়টি কাকতালীয় বলেই মনে হয়, তবু দেশটির অনেকেই বিষয়টিকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন।
এদিকে, নাম পরিবর্তনের জল্পনা শেষ পর্যন্ত সত্যি হয় আর ভারতের সংসদে সেটি অনুমোদন পায়, তাহলে বিশ্বমানচিত্র থেকে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি হারিয়ে যাবে। মুছে যাবে এই নাম। মানচিত্রে তার বদলে জায়গা করে নেবে ‘ভারত’ শব্দটি।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার।