হাইকোর্টের নির্দেশে বাতিল করা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬৯ জন ছাত্রীর ভর্তি বহাল রাখার দাবিতে মানববন্ধন করছেন সেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
রোববার (১০ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টায় ভিকারুননিসার মূল শাখার সামনে এই মানববন্ধন শুরু হয়।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, আমরা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সব নির্দেশনা যথাযথ নিয়ম মেনে ভর্তির আবেদন করি। কর্তৃপক্ষ তা যাচাই-বাছাই করে ভর্তি বিষয়ে অনুমতি প্রদান করে। ভর্তি হয়ে বাচ্চারা ৬ মার্চ পর্যন্ত ক্লাসও করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে আদালতের রায় আসে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে আমরা আগে থেকে কিছুই জানতাম না। প্রতিষ্ঠান থেকেও কিছু অবহিত না করে হঠাৎ করেই ভর্তি বাতিল করে আমাদের জানানো হয়। এখন আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? তাই আমরা চাই, বাতিল না করে ভর্তি যেন বহাল রাখা হয়।
মানববন্ধনে মোক্তাদির আহমেদ বলেন, মাউশির ভর্তির সার্কুলার দেখে আমরা আবেদন করি। ৪০ শতাংশ এলাকা কোটাসহ সব নিয়মকানুন মেনেই আমার বাচ্চা লটারিতে ভর্তি হয়েছে। সব প্রক্রিয়া মেনে ভর্তি করার পর কেন আমার ভর্তি বাতিল হবে? এর দায় মাউশি ও ভিকারুননিসার। কোমলমতি বাচ্চারা এর জন্য কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ছিল। সেখানে ‘আমাদের ভবিষ্যৎ কী’, ‘আমি কি আর আমার স্কুলে যেতে পারবো না’, ‘মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ চাই’, ‘বিনা দোষে আমার স্কুল গেট আমার জন্য বন্ধ কেন’, ‘আমরা এখানেই পড়বো’, ‘মাউশির ভুলের মাশুল আমরা ভোগ করব কেন’, ‘আমরা তো ছোট শিশু নির্দোষ, আমরা কেন স্কুলে ছেড়ে রাস্তায়’ ইত্যাদি লেখা ছিল।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের ভর্তি বাতিল করে মাউশিকে জানাতে বলা হয়। বাতিল শিক্ষার্থীরা বেইলি রোডের মূল শাখা, আজিমপুর, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা শাখার শিক্ষার্থী।
মাউশির চিঠিতে বলা হয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা (নিজেদের নির্ধারিত) অনুসরণ না করে ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের পূর্বে জন্মগ্রহণকারী (প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রেরিত সংযুক্ত তালিকায় বর্ণিত) শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাটা ছিল বিধিবহির্ভূত।
এ অবস্থায়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হওয়া ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জনসহ মোট ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বিভিন্ন শাখায় এ ১৬৯ শিক্ষার্থীকে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেন। সাড়া না পেয়ে ওই দুই অভিভাবক হাইকোর্টে রিট করেন। গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।
সে অনুযায়ী ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করতে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। সেই নির্দেশনা এফিডেভিট আকারে আজ হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়।