

ভারতের অষ্টাদশ সংসদীয় নির্বাচনের চতুর্থ দফাও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। সোমবার ৯৬ আসনের ভোটগ্রহণে বিক্ষিপ্ত বিশৃঙ্খলা ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ঘটেনি।
আগের তিন দফার মতো এবারও ভারতের ৯টি অঙ্গরাজ্য ও ১টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটদানের হার বিকাল পর্যন্ত ছিল গড়ে ৬২.৩০ শতাংশ। সন্ধ্যা ৬টায় এটা বেড়ে ৬৬ শতাংশ হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের আটটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটদানের হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছুঁয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিকাল ৫টা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আটটি কেন্দ্রে ভোটদানের হার ছিল ৭৫.৬৬ শতাংশ। এরপর আরও এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ হলেও বর্ধমান ও বীরভূমের বহু বুথে রাত পর্যন্ত ভোটদাতাদের দীর্ঘ সারি ছিল।
তবে সোমবার দুপুরে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সেটি বড় ধরনের কোনো সহিংসতায় রূপ নেয়নি বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
চতুর্থ দফা ভোটের মধ্য দিয়ে কার্যত নির্ধারিত হয়ে গেল ভারতের ভোটের ভবিষ্যৎ। চতুর্থ দফা ভোটের আগের দিনই পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনি সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, ‘বিজেপি এবার নির্বাচনে এমন ভালো ফল করবে, যে ভোটে পণ্ডিতরাও চমকে যাবেন।’ অন্যদিকে এদিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পালটা দাবি করেন, ‘বিজেপি ২০০ আসন পার হবে না। বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোট পাবে ৩১৫ আর বিজেপি পাবে ১৯৫ আসন।’ স্বভাবতই মোদি-মমতার বাদানুবাদে তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি।
ভারতের ১০টি অঙ্গরাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১ হাজার ৭১৭ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল এই চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এ পর্বে যেসব হেভিওয়েট ও তারকা প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল তার মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব, আসাদউদ্দিন ওয়েইসি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী, ওয়াইএস শর্মিলা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের তিনজন হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী। এ তারকা প্রার্থীরা হলেন- বীরভূম কেন্দ্রের তিনবারের সংসদ-সদস্য ও দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শতাব্দী রায়, আসানসোল কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার সংসদ-সদস্য হওয়ার দৌড়ে নামা বলিউড অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটজয়ী দলের সদস্য সাবেক ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।
চতুর্থ দফায় পশ্চিমবঙ্গের এই আট আসন ছাড়াও ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের ২৫, বিহারের ৫, ঝাড়খণ্ডের ৪, মধ্যপ্রদেশের ৮, মহারাষ্ট্রের ১১, ওড়িশার ৪, তেলেঙ্গানার ১৭, উত্তরপ্রদেশের ১৩ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের ১ আসনে।
চতুর্থ দফায় পশ্চিমবঙ্গে যে আটটি আসনের ভোট হয়েছে, সেগুলো হলো বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, আসানসোল, বীরভূম ও বোলপুর। এ আট আসনে যাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেল সেই তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ, শত্রুঘ্ন সিনহা, লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী, বিতর্কিত তৃণমূল সংসদ-সদস্য মহুয়া মৈত্র, কৃষ্ণনগরের রাজমাতা অমৃতা রায়, অভিনেত্রী শতাব্দী রায় ও বঙ্গ-বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ভারতে সাত পর্বের ভোটগ্রহণ শেষ হবে ১ জুন; কিন্তু গণনা হবে ৪ জুন সকাল থেকে।