নভেম্বর ১৫, ২০২৪

দেশের পুঁজিবাজারে ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তাই, এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ব্যাকঅফিস সফটওয়্যার ব্যবহার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইনডেক্স ম্যানেজমেন্ট, ডেটা সার্ভিসেস নিয়ে প্রকাশনা বিভাগের মাসিক পর্যালোচনা অর্ধবার্ষিকীর বিশেষ সংস্করণের জুনের কপি কেনার তথ্য জমা দিতে বলেছে ডিএসই।

সম্প্রতি সকল ট্রেকহোল্ডার বা ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে এবং বন্ধ হয়েছে। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই-সিএসই) সকল ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যাকঅফিস সফটওয়্যারের ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করবে ডিএসই।

সকল ব্রোকারেজ হাউজকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলম সার্টিফিকেট) রুলস, ২০২০ এর প্রবিধান ৮(৭) অবহিত করে ব্যাকঅফিস সফটওয়্যারের তথ্য জমা দেওয়ার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সকল ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাকঅফিস সফ্টওয়্যার ব্যবহার সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হলো। এই বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউজকে আগামী মঙ্গলবারের (১১ জুলাই) মধ্যে গুগল ফর্ম পূরণ করতে হবে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ফর্মটি পূরণ করে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

অপরদিকে, ডিএসই মাসিক পর্যালোচনা অর্ধবার্ষিকীর বিশেষ সংস্করণ কেনার বিষয়ে চিঠিতে জানানো হয়েছে, ইনডেক্স ম্যানেজমেন্ট, ডেটা সার্ভিসেস নিয়ে ডিএসইর প্রকাশনা বিভাগ মাসিক পর্যালোচনা অর্ধবার্ষিকীর বিশেষ সংস্করণ জুন ইস্যু প্রকাশ করতে যাচ্ছে। ইস্যুতে পুঁজিবাজারের অর্ধবার্ষিক তথ্য পর্যালোচনা করা হবে। যদি ব্রোকারেজ হাউজের অর্ধবার্ষিক বিশেষ সংস্করণের অতিরিক্ত কপি কেনার ইচ্ছা থাকে, তাহলে চিঠিতে উল্লেখিত নিয়ম বা ফরম্যাটে তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে।

গত কয়েক বছরে তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে। এর পর ডিএসই ও সিএসই‘র সব ব্রোকারেজ হাউজ পরিদর্শন ও তদন্তের নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তসাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এর পর থেকে ১০২টি প্রতিষ্ঠান ৫৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সমন্বয় করেছে। বাকি ৬টি ব্রোকারেজ হাউজ ৪৯ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি।

এর মধ্যে সিনহা সিকিউরিটিজের ঘাটতি আছে ৯ কোটি ৮২ লাখ ২৪ হাজার টাকা, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ঘাটতি আছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ৩৩ কোটি ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ঘাটতি আছে পিএফআই সিকিউরিটিজের, এশিয়া সিকিউরিটিজের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া, লতিফ সিকিউরিটিজের ৩২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা এবং মডার্ন সিকিউরিটিজের ৫ কোটি ২৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঘাটতি আছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, বিএসইসি গত বছর ২২ মার্চ সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলোর মধ্যে আছে—স্টক এক্সচেঞ্জকে লিমিটি সুবিধা স্থগিত করা হবে, যোগ্য বিনিয়োগকারী হিসাবে আইপিও কোটা সুবিধা বাতিল হবে, স্টক এক্সচেঞ্জের মালিকানার বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশ স্থগিত থাকবে এবং ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারীর নিবন্ধন এবং নতুন শাখা ও বুথ খোলা বন্ধ রাখা হবে। তার আগে ২১ মার্চ বিনিয়োগকারীদের আমানত অর্থাৎ শেয়ার ও অর্থ সরিয়ে নেওয়া তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ ও বানকো সিকিউরিটিজসহ ২৫টি ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন সনদ নবায়ন বন্ধসহ নানা সুযোগ-সুবিধা স্থগিত করা হয়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...