সুপারিশ আর অনিয়ম-অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন উপায়ে ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না গ্রাহক। ফলে দিন দিন মন্দ ঋণের বোঝা বাড়ছে আর সমস্যায় পড়ছে ব্যাংকগুলো। খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে খুব কম। যেগুলো নিষ্পত্তি হচ্ছে সেগুলোর পাওনা ঠিকঠাক আদায় হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদালতে এই মুহূর্তে ব্যাংক খাতের ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা আটকে আছে এসব মামলায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় মাস পরপর এসব মামলার হালনাগাদ তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন তৈরি করে। সবশেষ প্রতিবেদনে গত জুন মাস পর্যন্ত আপডেট তথ্য রয়েছে।
প্রতিবেদনে অর্থঋণ আদালত ও দেউলিয়া মামলার তথ্য দেওয়া আছে। সাধারণত যেসব খেলাপি ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা কম থাকে, সেগুলো আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করে ব্যাংকগুলো।
২০২৩ সালের জুন শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ৫৪০টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে ডিসেম্বর শেষে অর্থঋণ আদালতে ৭২ হাজার ১৮৯টি বিচারাধীন মামলার বিপরীতে আটকে ছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে বিচারাধীন মামলা বেড়েছে ৩৭১টি। এর বিপরীতে নতুন করে ১১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা আটকে পড়েছে।
এক বছর আগে (জুন-২০২২) অর্থঋণ আদালতে ৬৯ হাজার ৩৬৯টি মামলার বিপরীতে আটকা ছিল এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
ছয় মাস আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মামলার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৩৪৮টি। এর বিপরীতে পাওনা টাকার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৯ হাজার ১৮৪ কোটি। সেসময় মোট আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে নতুন করে মামলা বেড়েছে ছয় হাজার ৮০টি, দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২১ হাজার ৩০৫ কোটি এবং তার বিপরীতে আদায় বেড়েছে মাত্র দুই হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
এছাড়া বিদেশি ব্যাংকে ৮ হাজার ৫৩১টি মামলায় আটকা ৩ হাজার ৯২০ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোতে ৪ হাজার ৯৩৪টি মামলায় আটকা আছে ২ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
অর্থঋণ আদালতের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মামলার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ অনেক ব্যাংক মামলা করার পর নিয়মিত খোঁজ খবর রাখে না। বাদী ও আসামি উপস্থিত না থাকায় মামলা বছরের পর বছর ঘুরতে থাকে। পরিবর্তন হতেই থাকে শুনানির তারিখ। ২০ বছর ধরে মামলার খবর না রাখারও নজির আছে। এমন কাজ করেছে একাধিক বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। এসব ঘটনার পেছনে ব্যাংক ও গ্রাহকের যোগসাজশ রয়েছে বলে জানান তিনি।