অক্টোবর ৪, ২০২৪

টানা ১৫ বছর ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা লুট করেছেন। আর এই টাকা নিয়ে সৌদির খেজুর বাগানে করেছেন বিনিয়োগ। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ তহবিলেও দিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সিআইডি জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সূত্র জানায়, লন্ডন এবং হংকং ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে একাধিক কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা করছেন।

এছাড়া ২০১৫ সালের দিকে তিনি সৌদি আরবের কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেন। সৌদির একাধিক খেজুর বাগানে তার বিনিয়োগ রয়েছে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া প্রায় দেড় দশক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেন, সব ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা তখন জিম্মি ছিলেন, কেউ কথা বলতে পারতেন না। নজরুল ইসলাম মজুমদার যা বলতেন, তাই হতো। ব্যাংক খাতের আজকের দুর্দশার জন্য বিএবি বড় অংশে দায়ী। বিএবির মতো একটা প্রতিষ্ঠান তখন খেলাধুলায় ব্যস্ত ছিল।

গত মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে। এর পরের দিন মজুমদারের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

আদালত সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট ইমন হোসেন গাজী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নজরুল ইসলাম মজুমদার ব্যাংক খাতে অঘোষিত মাফিয়া। তিনি টানা দেড় দশক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের (বিএবি) চেয়ারম্যান ছিলেন। তার কথার ওপর কেউ কথা বলতে পারতেন না। শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। হাসিনার নামেই তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলতেন। প্রতিবছর কয়েক শ কোটি টাকার চাঁদা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিতেন। ছোট ও নতুন ব্যাংক থেকে ২-৩ কোটি, মধ্যম সারির ব্যাংক থেকে ৪-৬ কোটি এবং বড় ব্যাংক থেকে ১০-২০ কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। এছাড়া আন্তঃব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্ট ছেড়ে কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। প্রতিটি ব্যাংকের শুধু এন্ট্রি ফিই ছিল ২৫ লাখ টাকা। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *