গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ সময়ে দ্রুত বেড়েছে সরকারের ব্যাংক ঋণ। গত ২৭ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৮২ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। গত মে পর্যন্ত ১১ মাসে যেখানে ঋণ নিয়েছিল ৬১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। এর আগে গত জানুয়ারি পর্যন্ত যেখানে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বেশি ছিল ১২০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের হিসাব চূড়ান্ত হলে ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা কমেছে। আবার রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রির কারণে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংক এখন তারল্য সংকটে রয়েছে। তবে ১০ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতির কারণে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা ছাপিয়ে ঋণ নেওয়া বন্ধ রেখেছে সরকার।
তবে আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া, কাঙ্ক্ষিত বিদেশি ঋণ পাওয়া এবং সঞ্চয়পত্রে ঋণ না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়ায় সরকারের ঘাটতি সংস্থানে ব্যাংকেই নজর দিচ্ছে সরকার। সাধারণভাবে সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের সুদহার বেড়ে ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হন। গত মে পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৭ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যক ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের দায় শোধ হয়েছে ৫৩২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ১০৭ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৩ লাখ ২০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে এবার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত অর্থবছর ১৮ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। যদিও জুলাই-মে সময়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ উল্টো কমেছে ১৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।