ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে, সেই হারে আমানত পাচ্ছে না। এতে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। ফলে দৈনন্দিন টাকার চাহিদা মেটাতে এক ব্যাংককে আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হচ্ছে। বৃস্পতিবার কলমানিতে সুদের হার বেড়ে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। একই সময়ে গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এটি গত ১১ বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালে কলমানিতে গড় সুদের হার উঠেছিলো ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ হার বাড়িয়ে বাজারে টাকার প্রবাহে লাগাম টেনে মূল্যস্ফীতির হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে সব খাতেই ঋণের সুদ হার বাড়ছে। ইতোমধ্যে সরকারের ঋণ গ্রহণের ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে কলমানির সুদের হারও বেড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আন্তব্যাংক কলমানিতে ১ থেকে ৯০ দিন মেয়াদি মোট ৫ হাজার ৯৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যার গড় সুদহার উঠেছে ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। এর মধ্যে একদিন মেয়াদি ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ২৫২ কোটি টাকা, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ এবং সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আন্তব্যাংক কলমানির সঙ্গে শর্ট নোটিশে ধারের সুদের হারও বেড়েছে। গতকাল ৩ থেকে ১৪ দিন মেয়াদী ধারের সর্বোচ্চ সুদের হার ছিল ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। গড় সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৪৩ শতাংশে।
এদিকে কলমানির পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের স্বল্প মেয়াদী ধার করা অব্যাহত রেখেছে বেশ কয়েকটি ব্যাংক। গত বুধবার রেপো, তারল্য সহায়তা ও স্টান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি উপকরণের আওতায় ১৯ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগের দিন এই ধারের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পলিসি রেট বাড়িয়েছে। গত মাসে নীতিগত সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। সাধারণত পলিসি রেট বাড়ালেই কলমানি সুদহারও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধার দেওয়া হয়। ৯১ দিন, ৭ দিন, ৪ দিন, ২ দিন ও ১ দিনের মেয়াদে এই ধার দেওয়া-নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা ধার দেওয়া হয় এক দিনের মেয়াদে।