মন্ত্রিপরিষদ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ে ব্যবসায়ীরাই এখন নীতিনির্ধারক বলে দাবি বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতির (ক্যাব)। আর সেজন্যই ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে কথা বলতে মন্ত্রী-এমপি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিতরা দ্বিধাবোধ করেন বলে অভিমত সংগঠনটির। আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত ৩০০ জন এমপির মধ্যে ১৯৯ জনই ব্যবসায়ী। মন্ত্রিপরিষদ, সিটি করপোরেশন এমনকি রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যেও ব্যবসায়ীরাই এখন নীতিনির্ধারক। সে কারণে ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিতদের প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না।
সম্মেলনে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথা তুলে ধরে বক্তারা আরও বলেন, সামান্য ডিমে কিছু ব্যবসায়ী ৪ টাকা করে অতিরিক্ত মুনাফা করে প্রতিদিন ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কারও কোনো বক্তব্য নেই। এভাবেই চাল, ডাল, চিনি, সয়াবিন তেলে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে সরকার চারটি পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোয় কিছু ব্যবসায়ী বলে উঠলেন তাদের লোকসান হচ্ছে। আর তারা এতদিন মানুষের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত নিয়ে ফতুর করে দিচ্ছেন, সে বিষয়ে তাদের কোনও কথা নেই।
মাঠ পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে প্রধান অতিথি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জমান বলেন, ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ক্যাবকে জাতির প্রত্যাশা পূরণে আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যেকোনো নাগরিক ভোগান্তি ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন হলেই ভোক্তাদের পাশে দাঁড়ানো ও তাদের পক্ষে জোরালো কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দেশে ভোক্তাদের মাঝে আরও সচেতনতা বাড়াতে না পারলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈষম্য কমানো যাবে না। আর সে কাজে ক্যাবকেই দেশের সর্বত্র জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
এ সময় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাবকে শক্তিশালী করতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানোর আহ্বান জানান ক্যাবের জেলা পর্যায়ের নেতারা। কারণ হিসেবে তারা জানান, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের বিভিন্ন সুবিধা ও প্রণোদনা পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। সেখানে ক্যাব এখনও ঘরের খেয়ে বনের মোষ আর কত কাল তাড়াবে?
ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও ক্যাব মহানগর কমিটির সহসভাপতি আবিদা আজাদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক ফয়েজউল্যাহ ও জেলা সহকারী পরিচালক নাসরীন আকতার প্রমুখ। সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৭০ জন ক্যাব নেতা অংশগ্রহণ করেন।