স্বাধীনের পর থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর বন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে শুধু দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) পাসপোর্টধারী যাত্রীরা আসা যাওয়া করতে পারতেন। ১৯৯৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পরও চালু হয়নি পূর্ণাঙ্গ কাস্টমস হাউজ। নেই সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতিও। ফলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা থাকার পরও দেশের অন্য বন্দরের তুলনায় পিছিয়ে আছে এই বন্দরটি।
সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ভোমরা স্থলবন্দর। এই বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দর। সেখান থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। তবে কাস্টমস হাউজ চালু না হওয়ায় এখনও এই বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বন্দরটিতে নেই কোনো সরকারি ট্রাক টার্মিনাল, ফায়ার স্টেশন, হাসপাতাল ও পুলিশ ফাঁড়ি। কয়েক বছর আগেও এই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ আদা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, আপেল, আঙুরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। তবে বর্তমানে অন্য বন্দরের তুলনায় শুল্ক ছাড় কম থাকায় কমেছে ফল আমদানি। সব পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য ঢোকার অনুমতি রয়েছে, কাস্টমস হাউজ চালু না হওয়া ও আমদানিযোগ্য সব পণ্যের অনুমতি প্রদান সমস্যার কারণে তার সবগুলো ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। একইসঙ্গে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এছাড়া ভোমরা বন্দরের ওপর নির্ভরশীল এ এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। কাস্টমস হাউজ চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে এবং হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, এ বন্দর থেকে গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯ কোটি টাকা। সেখানে লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। কাস্টমস হাউজসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দরের সব পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হলে এখানে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানান, কাস্টমস হাউজ প্রতিষ্ঠা হলে আমরা সব ধরনের পণ্য আমদানির সুবিধা পাব। এছাড়াও ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের শেড না থাকা ও কিপিং লাইসেন্স নেই। কিন্তু কাস্টমস হাউজ বাস্তবায়ন হলে এগুলো চলে আসবে। আমরা একজন কমিশনার পাব। আমাদের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমের জন্য আর খুলনায় যেতে হবে না। বর্তমানে এই বন্দরে সব ধরনের পণ্য আমদানির সুযোগ না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।
‘কলকাতা থেকে ভোমরার দূরত্ব কম। পদ্মা সেতু হয়ে খুবই উপকার হয়েছে ব্যবসায়ীদের। মাত্র ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা মালামাল দেশের যেকোনো স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে। তবে ভোমরা স্থলবন্দরে কাস্টমস হাউস না থাকায় ৭২টি পণ্যের অনুমোদন থাকলেও ২২ থেকে ২৫টি এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। সব পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা পদ্মা সেতুর পুরো সুফল পাচ্ছেন না, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, ভোমরা বন্দরের যে অবকাঠামো উন্নয়নগুলো বাকি রয়েছে সেগুলো জরুরি ভিত্তিতে শেষ করা এবং বিশেষ করে ট্রাক টার্মিনাল। এছাড়াও কাস্টম হাউজের ব্যাপারে মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতা কামনা করছি। ভোমরা ব্যবসায়ীদের দাবি একটাই কাস্টম হাউজ বাস্তবায়ন। পদ্মা সেতু হওয়ার পর সাতক্ষীরার অর্থনীতি আমূল বদলে গেছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধা হয়েছে। চাইলে তারা দিনের কাজ শেষ করে দিনে ফিরে আসতে পারছেন। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। মাছ অক্সিজেনের মাধ্যমে ঢাকাসহ পাশের জেলায় যাচ্ছে। আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পেঁয়াজ, আদাসহ কাঁচামাল ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাচ্ছে।
‘পদ্মা সেতু চালু হওয়াতে ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা ও ঢাকার দূরত্ব কমেছে দ্বিগুণ। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষে কাস্টমস হাউজ চালু হলেই পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপ নেবে ভোমরা বন্দর। তখন সুযোগ সুবিধাও বাড়বে। এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে এমনটাই নয় সরকারও পাবে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।’