এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে নিতে যে পুনর্বিন্যাসকৃত সময়সূচি (রুটিন) প্রকাশ করা হয়েছে, তাও বাতিল হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের কিছু বিষয়ের পরীক্ষা সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে কিছু বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর সংশোধিত নতুন সময়সূচি দিয়েও পরীক্ষা নিতে পারেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর স্থগিত পরীক্ষাগুলো নিতে আবারও সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। পুনর্বিন্যাসকৃত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো শুরু হওয়ার কথা। তবে আর পরীক্ষায় বসতে চান না শিক্ষার্থীরা।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অটো পাস অথবা এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে ফল তৈরির দাবি তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। এ নিয়ে নেমেছেন আন্দোলনেও। গত ১৫ আগস্ট নতুন সময়সূচি প্রকাশের পর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবারও (১৯ আগস্ট) রাজধানীসহ সারাদেশে অটো পাসের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ড ঘেরাও ও কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটেছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের অনেক সহপাঠী পরীক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন। তাছাড়া বিভিন্ন থানায় রাখা প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তারা আর বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষায় অংশ নিতে চান না।
এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবগত করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আব্দুর রশিদ আপাতত ঘোষিত রুটিন বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) শিক্ষা উপদেষ্টা, সচিব, সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের বৈঠকে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো জানিয়েছিলাম। সেখান থেকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে আবার মঙ্গলবার সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে শিক্ষা উপদেষ্টা, সচিব, বোর্ড চেয়ারম্যানরা অংশ নেবেন। সেখানেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে।
গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর আর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
সূচি অনুযায়ী এখনো ১৩ দিনের মোট ৬১টি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা আটকে গেছে। যদিও প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১৩টি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এর মধ্যে বাধ্যতামূলক বাংলা ও ইংরেজির চারটি বিষয় (প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র) এবং আইসিটি। ৮টি বিষয় ঐচ্ছিক (অপশনাল)।