নভেম্বর ১৬, ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য ও গুজব প্রচার করে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগে আটক মো. আবু রমিম নামে এক ব্যক্তির একদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আহমেদ রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের (উত্তর) পরিদর্শক মো. দাউদ হোসেন বলেন, বিএসইসির মামলা দায়ের করার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর উচ্চ আদালতে হাজির হন এবং তিন সপ্তাহের জামিন পান। পরবর্তীতে তিনি চলতি বছরের ১২ মার্চ নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। কিন্তু আদালত তার জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। এরপর আদালত থেকে আদেশ হাতে পাই ও রিমান্ড আবেদন করি। সে পরিপ্রেক্ষিতে আজ আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বুধবার (২২ মার্চ) তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগর মাধ্যমে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেন আবু রমিম। তিনি ‘বিডি স্টকস ডিসকাশন (https://www.facebook.com/bdstocksdiscussion)’ পেজ থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছিলেন বলে বিএসইসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। ওই অনুসন্ধান রিপোর্ট ও তথ্য পর্যালোচনা করে বিএসইসির পক্ষ থেকে গত বছরের ২০ নভেম্বর রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত রমিমকে গত ১৯ মার্চ আটক করেছেন ডিবি পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ডিভিশনের (উত্তর) ইন্সপেক্টর মো. দাউদ হোসেন।

বিএসইসির দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মো. আবু রমিম চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানার ১১/বি বেভারলী হিল, চকবাজারে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায়। তিনি ফেসবুক পেজ ‘বিডি স্টকস ডিসকাশন (https://www.facebook.com/bdstocksdiscussion)’ এর মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা বা বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করার উদ্দেশে তার পরিচালিত ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, কাল্পনিক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পোস্ট করতেন।

রমিমের উল্লেখযোগ্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য তুলে ধরা হলো-

‘একটি অনির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গতদিন পাকিস্তান হারাতে আজ বাজার কমেছে- এর পেছনে বিএনপি-জামায়াত চক্রের হাত থাকতে পারে। এটিবি ফেটেবি বাদ দিয়া মূল বাজারের দিকে মনোযোগ দিন’।

‘পুরাই ইন্ডিয়ান চুলের মার্কেট করে দিছে, আজ সব চার্টিস ধরা!!’

‘আশা করা যায় আগামীকাল চেক সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের স্থগিতাদেশ আসবে, যতক্ষণ না আসবে ততক্ষণ মাইর চলবে। যদি ট্রেড আওয়ারে আসে, তবে মার্কেট U টার্ন করবে এবং কোন কারণে ট্রেড আওয়ারে না আসলে ট্রেড শেষে মাস্ট। যাদের ক্রয় ক্ষমতা আছে আগামীকাল তাদের জন্য অভাবিত কম দামে কেনার সুযোগ থাকবে। নেটিং এর রিস্ক না নেয়াটাই ভাল, কোন কারণে স্থগিতাদেশ ট্রেড আওয়ারে না আসলে ধরা খেয়ে যাবেন। ইনশা আল্লাহ, আশা করি ভাল কিছু হবে।’

বিএসইসি মনে করে, অভিযুক্ত ব্যক্তি তথা মো. আবু রমিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য প্রচার করে সাধারণ জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছেন। তিনি বেআইনিভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশে উল্লিখিত কার্যকলাপের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্ররোচনা ও প্রলুব্ধ করে আসছেন। এরূপ কার্যকলাপের মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে বেআইনি কার্যকলাপ সাধন করছেন, যা পুঁজিবাজার তথা বিনিয়োগকারী এবং সার্বিকভাবে রাষ্ট্রের স্বার্থ-বিরোধী কার্যক্রম বটে।

পুঁজিবাজারে একটি চক্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিনব উপায়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে লিপ্ত রয়েছে। তারা পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ও স্বীয় অসদুদ্দেশ্য চরিতার্থ করার বিভিন্ন অপকর্ম করছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত আবু রমিম উল্লিখিত ফেসবুক পোস্ট ব্যবহার করে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্ররোচনার মাধ্যমে প্রতারণার জালে ফেলছে। এ ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম কেবলমাত্র ফৌজদারি অপরাধই না, এর সাথে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও স্থিতিশীলতা বিনষ্টের উপাদান রয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।

এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘ফেসবুকে পুঁজিবাজার সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য প্রচার করার অভিযোগে বিএসইসির পক্ষ থেকে মো. আবু রমিমের বিরুদ্ধে মামলার এজাহার করা হয়েছে। এখন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...