নভেম্বর ২৮, ২০২৪

২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মোট পণ্য রফতানিতে পোশাকবহির্ভূত পণ্যের অবদান কমেছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় রফতানি ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে ৬৪৭ কোটি ডলারে নেমেছে। এর মধ্যে সর্বাধিক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পেট্রোলিয়াম উপজাত রফতানিতে। তার পরই রয়েছে কার্পেট (পাট ও অন্যান্য), কৃষি পণ্য, প্রকৌশল পণ্য এবং হিমায়িত ও তাজা মাছ। বিজিএমইএ সংকলিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পোশাকবহির্ভূত খাতের পণ্য রফতানি কমে যাওয়া দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে ডলার সংকটে ভুগছে। নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। তৈরি পোশাক খাত ছাড়া অন্য খাতগুলোয় কমেছে রফতানি আয়। আগামীতে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটলে তৈরি পোশাক রফতানির ওপর বড় আঘাত আসার আশঙ্কা রয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের মতো অন্য খাতগুলোয়ও গুরুত্ব দিয়ে রফতানি আয় বাড়াতে হবে। তা না হলে সামগ্রিকভাবে রফতানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪৭ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ডলারের পোশাকবহির্ভূত পণ্য রফতানি করে। এর আগের অর্থবছর যা ৭০৮ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রফতানি কমেছে ৬১ কোটি ২ লাখ ৯০ হাজার ডলারের।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ছয় অর্থবছরের মধ্যে ২০১৮-১৯-এ পোশাকবহির্ভূত খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর পরের বছর রফতানি কমে ১০ শতাংশেরও বেশি। পরবর্তী ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থাৎ টানা দুই অর্থবছরে রফতানিতে লক্ষণীয় প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আবারো নেতিবাচক হয়ে পড়ে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেও রফতানির চিত্র ছিল নিম্নমুখী।

পোশাকবহির্ভূত রফতানি পণ্যের মধ্যে অন্যতম চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, হিমায়িত ও তাজা মাছ, কার্পেট, পেট্রোলিয়াম উপজাত। এসব পণ্যের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব পণ্য রফতানি হয় ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা ছিল ১২৪ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার ডলারের। সে হিসাবে রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১২ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের রফতানি হলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে ৯১ কোটি ২২ লাখ ডলারে নামে। কৃষি পণ্য রফতানি ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে নেমেছে ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের প্রকৌশল পণ্য রফতানি হলেও আগের অর্থবছরে তা ছিল ৭৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রফতানি কমেছে ২০ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের।

পোশাকবহির্ভূত পণ্য রফতানি বাড়াতে রফতানি বৈচিত্র্যকরণে জোর দিতে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবি-সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি খাতে সরকার বৈচিত্র্য আনয়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগগুলোর সুফল রাতারাতি পাওয়া যাবে না। এগুলো সময়সাপেক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতির কারণে রফতানি বৃদ্ধি করা যায়নি। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রফতানি বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নীতিসুবিধা আদায়, প্রাপ্তি ও কার্যকর হওয়া সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে রফতানি খাতকে আরো বৈচিত্র্যময় করতে হবে। তাহলে রফতানি নেতিবাচক হবে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘‌তৈরি পোশাক শিল্পের রফতানি প্রবৃদ্ধি যখন ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ, তখন পোশাকবহির্ভূত পণ্য রফতানি কমেছে ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এমন পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নিদর্শন নয়। আমরা সবসময় রফতানি বৈচিত্র্যকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘‌তৈরি পোশাক রফতানিতে এ গতি দৈবক্রমে আসেনি। আমরা নতুন সময়ে ভাঙার সাহস করেছি। অব্যবহৃত বাজারে রফতানি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে বিনিয়োগ করেছি। আমাদের সরবরাহ চেইন সুরক্ষিত করা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করার মধ্য দিয়ে তা নিশ্চিত করেছি।’

রফতানিকারকদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পোশাক খাতে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের হিস্যা ধরে রেখে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। সাহস ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও শ্রমিকরা এটা সম্ভব করেছেন। অন্য খাতের উদ্যোক্তারা সাহসী ভূমিকা রাখতে পারেননি। নীতিসহায়তা কাজে লাগানোর সক্ষমতাও অর্জন করতে হবে তাদের। এজন্য উদ্যোক্তাদের সাহস ও নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...