সময় ভাল যাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজারের। নানা কারণে বাজারে বিরাজ করছে তীব্র মন্দা। দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বাজার চলছে ফ্লোরপ্রাইস নামের কৃত্রিম ব্যবস্থায়। এর মধ্যেই আসছে নানা খারাপ খবর। একেকটি খবর বাজারকে বড় ঝাঁকুনি দিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশংকা। শনিবার একজন সিনিয়র সাংবাদিকে লেখা কলামে এ আশংকার কথা তুলে ধরা হয়। তাতে তীব্র অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে বাজারে।
রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধরনের দর পতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সব মূল্যসূচক কমেছে। এই বাজারের প্রধান মূলসূচক ডিএসইএক্স এদিন ২৪ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ কমেছে।
রোববার ডিএসইতে ২৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪টির দাম বেড়েছে। কমেছে ১৩৪টির দাম। আর ১৪৯টির দাম ছিল অপরিবর্তিত। এই অপরিবর্তিত কোম্পানিগুলোর প্রায় সবক’টির শেয়ারের দাম আগে থেকেই ফ্লোরপ্রাইসে আটকে আছে। এ কারণে রোববার পতনের তীব্রতা কতটা ছিল, তা পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয়নি।
সূচকের পাশাপাশি রোববার বাজারে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে্ এদিন ডিএসইতে ৩৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ৩৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর দেশের ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির নেতিবাচ প্রভাব পড়ে আমাদের পুঁজিবাজারে। বিশেষ করে শ্রীলংকার তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কট দেশেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বড় দরপতন এড়াতে দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করা হয়। গত দেড় বছরে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে ক্রমাগত দেশের রিজার্ভ কমতে থাকা, ব্যাংকে খেলাপী ঋণের রেকর্ড, রেমিট্যান্সে নিম্নমুখী ধারা, শর্ত পূরণের ব্যর্থতায় আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ ছাড় না হওয়ার আশংকা ইত্যাদি নেতিবাচক খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। নতুন বছরের শুরুতে দেশে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও আছে নানা অনিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তাও বিনীয়োগকারীদের আস্থাকে নড়বড়ে করেছে।
এর মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকারকে বাধাগ্রস্তকারীদের বিরুদ্ধে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। তবে তাতেও জটিলতার অবসানের কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে বলে একাধিক বিশ্লেষক আশংকা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে লেখা নিজস্ব কলামে পত্রিকাটির সম্পাদক আবেদ খান আশংকা প্রকাশ করেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার অনুসারী দেশগুলো বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। শিগগিরই ঘটতে পারে এ ঘটনা। এই খবরে পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যার প্রতিফলন দেখা যায় রোববারের বাজারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজার নিয়ে এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত সবাই দায়িত্বশীলতার পথ বেছে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর কোনো কারণে যদি যুক্তরাষ্ট্র দুয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেও, তাতে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর পারফরম্যান্সে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না।