নভেম্বর ১৫, ২০২৪

পাকিস্তানে কর্মসংস্থানের অভাব, স্বল্প বেতন ও ক্যারিয়ার বড় করার সুযোগ অনেক বছর ধরেই কম৷ সেই সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে দেশটি৷ সম্প্রতি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের মধ্যকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বিক্ষোভ ও সহিংসতার পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ এদিকে দেশটির রূপির দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে৷ পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থা আইএমএফের ঋণও যোগাড় করতে পারছে না৷ আমদানি খরচ আকাশ ছুঁয়েছে৷

এই পরিস্থিতিতে শিক্ষিত পাকিস্তানিদের অনেকেই দেশ চাড়তে চাইছেন৷ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ একটি ডিজিটাল মার্কেটিং স্টার্টআপে কাজ করেন সানা হাশিম৷ আরো অনেকের মত তিনি বিদেশে গিয়ে আরো ভালো চাকরি করতে চান৷ কিন্তু পরিবারকে ছেড়ে যাওয়া কঠিন৷ ২৯ বছর বয়সি এই নারী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছিলাম৷ ইন্টারভিউতে ডাকও পেয়েছি৷ কিন্তু চাকরি হয়ে গেলেও যে সাথে সাথেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে পারব তা নয়৷ বাবা মাকে কে দেখবে?’

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় দুই লাখ ২৫ হাজার পাকিস্তানী দেশের বাইরে চলে গেছেন৷ এই সংখ্যা গত বছর প্রায় তিনগুণ হয়েছে৷ গত বছর বিদেশে যাওয়াদের মধ্যে ৯২ হাজার ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ ও হিসাবরক্ষক আছেন৷ কেউ গেছেন পশ্চিমের দেশগুলোতে, কেউ বা মধ্যপ্রাচ্যে- বিশেষ করে সৌদি আরব বা আরব আমিরাতে৷

২০২৩ সালে এই সংখ্যা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ প্রথম তিন মাসেই প্রায় দুই লাখ পাকিস্তানি দেশ ছেড়েছেন৷ আইটি স্পেশালিস্ট নৌমান শাহ গত বছর সৌদি আরব পাড়ি দিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় এতটাই বেড়েছে যে তার আর পাকিস্তানে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না৷ যা আয় করছিলাম তাতে ঘর চলছিল না৷ তাই সৌদি আরবে খুব ভালো চাকরির সুযোগ পেয়ে চলে আসি৷

বিদেশে পড়তে আসা পাকিস্তানি শিক্ষার্থীরাও পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত৷ আগে বাইরে পড়া অনেক শিক্ষার্থী দেশে ফিরে চাকরিতে যোগ দিতেন৷ এখনকার পরিস্থিততে সে হারও কমেছে৷ তারা বিদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ খুঁজছেন৷

‘অস্ট্রেলিয়ায় আমার পড়ার খরচ দিতে গিয়ে আমার বাবা-মা খুবই সমস্যায় পড়েছেন৷ কিন্তু যখন আমি অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট পেয়ে যাব, তখন পরিস্থিতি বদলে যাবে’- অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানরত পাকিস্তানি শিক্ষার্থী উজালা তারিক বলেন ডয়চে ভেলেকে৷

দেশটির স্বাস্থ্যখাতেও মেধাপাচারের বিষয়টি চোখে পড়ার মত৷ ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞরা এরই মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ ফলে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে এর প্রভাব পড়ছে৷ ‘আমাদের বেশ কয়েকজন উঁচু মানের চিকিৎসক যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন৷ কিন্তু তাদের কি দায়ী করা যায়? সরকারি হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুব খারাপ৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনও খুব কম’- বললেন করাচির স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ আফশীন আকবর৷

দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হবার জন্য সরকারের ওপর মানুষের ক্ষোভও বেড়েছে৷ তারা বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে কোন উদ্যোগ কার্যকর হবে না৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...