নভেম্বর ২৭, ২০২৪

বোরো ধান ক্ষেত পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার পরামর্শ নিতে একগুচ্ছ ধান নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়েছিলেন কৃষক ফজলুর রহমান (৬৫)। কিন্তু তাকে পরামর্শ না দিয়ে উল্টো অফিস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী কৃষক ফজলুর রহমান শিবালয় উপজেলার উথলী ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা।

কৃষক ফজলুর রহমান বলন, এ বছর ৬০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে পোকার আক্রমণে কচি ধান মরে যাচ্ছে। এতে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। তাই এক গুচ্ছ ধান হাতে নিয়ে সকালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যাই। এ সময় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন সুজনকে বিষয়টি জানাই এবং আমার বোরো ক্ষেত দেখতে যাওয়ার জন্য বলি। তখন ওনার কাছে জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের মোবাইল নম্বর চাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। পরে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে সালাহউদ্দিন সুজন বলেন, ‘আমি কি আপনার কামলা দেই। আপনি কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন। আপনি বললেই মাঠে যেতে হবে। যা পারেন করেন গা। আপনি বেরিয়ে যান। যদি বয়স্ক লোক না হতেন তাহলে আপনাকে দেখে নিতাম…।

এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগ দেন অফিসের অন্য স্টাফরাও। এক পর্যায়ে কৃষক ফজলুর রহমানকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। চোখের পানি মুছতে মুছতে অফিস থেকে বের হয়ে যান ফজলুর রহমান।

উপজেলা চত্বরে ওই কৃষক এ ঘটনা দুই সাংবাদিককে জানান। তারা ফজলুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে পুনরায় কৃষি অফিসে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কক্ষে গিয়ে সাংবাদিকরা কৃষকের এই অভিযোগের বিষয়টি জানান। এ সময় সাংবাদিকদের সামনেই রাজিয়া তরফদার ওই কৃষকের সঙ্গে ধমকের স্বরে কথা বলেন এবং আচরণ ঠিক হয়নি বলে তার দিকেই অভিযোগ তুলেন এবং ইংরেজিতে নানা বুলি আওড়ান। সাংবাদিকরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের ওপরও চড়াও হন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

কৃষকের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষকের অভিযোগ শুনেছি। যদি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোনো দোষ থেকে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া তরফদার জেলার দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস.এম ফয়েজ উদ্দিনের স্ত্রী। এ কারণে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার দাপট দেখান। তিনি নিজে ঠিক মতো অফিস করেন না। যে কারণে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে না গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া সার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ঘটনা জানার পর এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বেলাল হোসেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রবিআহ নূর আহমেদ জানান, কৃষি অফিসের দায়িত্বই হচ্ছে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করা। সেখানে কৃষকের অভিযোগের প্রতিকার না করে অফিসের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের বোরো খেত দেখতে বুধবার ঘটনাস্থলে জেলা থেকে একজন কর্মকর্তা পাঠানো হবে।

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...