পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি নূর চৌধুরীকে ফেরত আনতে চায়। কানাডার কাছে তাকে দেশে ফেরানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু দেশটি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে আগ্রহী নয়।
সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কানাডা ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। হাছান মাহমুদ বলেন, কানাডায় অবস্থান করা বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু কানাডায় মৃত্যুদন্ডের বিধান না থাকার বিষয়টি দেশটির রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেছেন। সেই কারণেই দন্ডিত কাউকে পাঠাতে দেশটি আগ্রহী নয় বলেও তিনি জানিয়েছেন। তবে রাষ্ট্রদূত নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক ব্যক্তি না হওয়ার কারণে কানাডা সরকারের কাছে বার্তা পৌছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, কানাডার রাষ্ট্রদূতের কাছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি যে মানবাধিকার একটি বৈশ্বিক ইস্যু। এটি আমেরিকা, ইউরোপে একটি ইস্যু। কানাডাতে তেমন বড় ইস্যু নয়। তিনি বলেছেন, এটি কাানাডাতেও ইস্যু। আমরা এটি নিয়ে যোগাযোগে আছি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মতামতকে আমরা মূল্য দেই।
নির্বাচনের পরে ‘হতাশা’ ব্যক্ত করে বিবৃতি দিয়েছিল কানাডা। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। বরং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর জন্যই তো কানাডার রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। মন্ত্রী জানান, কানাডাতে বাংলাদেশিরা যাতে বেশি অভিবাসন করতে পারে, সে জন্য কোনও অগ্রাধিকার দেওয়া যায় কিনা, বিশেষ করে কৃষিখাতে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডেনমার্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের পাশাপাশি দেশটি চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দেশটি বলছে, বাংলাদেশের সামনে জলবায়ু ইস্যুতে বহু ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতকে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, মিয়ানমারের ইস্যু নিয়ে ডেনমার্ক ও কানাডার দুই দেশের সাথেই কথা হয়েছে। উভয় দেশই রোহিঙ্গাদের স্ব-সম্মানে ফেরত পাঠানোর ব্যপারে একমত হয়েছে। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের জান্তার
সংঘাতের মর্টার শেল বাংলাদেশে এসে পরেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব সময় মিয়ানমারের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আর যাতে কোন শেল বাংলাদেশের ভেতরে না আসে সে বিষয়ে সর্তক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। বর্তমান রাখাইনে সহিংসতার কারণে নতুন করে রোহিঙ্গাদের কোন অনুপ্রবেশ করেনি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্তক অবস্থানের কারণে আগের মতো সেই সুযোগ নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, শ্রম আদালতের মামলায় জামিন নেওয়ার ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। শ্রমিকদের বঞ্চিত করার কারণেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিক্ষুব্ধরাই মামলা কারণে শ্রম আইন লঙ্ঘনের কারণে। অন্য কোন কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর কানাডার রাষ্ট্রদূত লিলি নিকোলাস বলেছেন, কানাডা ও বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে চাই। এই লক্ষ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে কানাডার বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আগামীতে দুই দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয়েছে।
কানাডার রাষ্ট্রদূত বলেন, কানাডা বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত অংশীদার। উন্নয়ন অংশীদারত্বে বাংলাদেশের সাথে থাকতে চায় কানাডা। সেই কারণে বাংলাদেশে মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা আর সুশীল সমাজের অবদান রাখার পথ উন্মুক্ত করার আহবান জানিয়েছি। এতো বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ ধন্যবাদ পাবার অধিকার রাখে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত।
ড্যানিশ রাষ্ট্রদূত ব্রিকস মোলার বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য- বিনিয়োগ এবং কার্যকর রাজনৈতিক সম্পর্ক্ততা, মানবাধিকার ইস্যুগুলোতে বাংলাদেশের সাথে আগামী দিনে ডেনমার্ক কাজ করতে চায়।
বাংলাদেশকে ডেনমার্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, অতীতের ধারাবাহিকতায় আমরা আগামীতেও কাজ করে যাবো। রাষ্ট্রদূত সম্পর্ক জোরদার করার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন। অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা বজায় থাকবে।