ভারতের গৌতম আদানির শিল্পগোষ্ঠীর ‘প্রতারণা’ নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকে টানা পড়ে চলেছে তাদের সাতটি সংস্থার শেয়ার দর। এ পরিস্থিতিতে বুধবার আদানি এন্টারপ্রাইজের নতুন শেয়ার ছাড়ার (এফপিও) প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে গেছে। ঘটনাচক্রে এ দিন ভারতের বার্ষিক কেন্দ্রীয় বাজেট প্রস্তাব করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন শেয়ার ছাড়ার যে সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছিল, তা আপাতত কার্যকর হচ্ছে না। ইতোমধ্যেই যারা এফপিও-তে আবেদন করেছেন, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথাও জানিয়েছে আদানি গোষ্ঠী। এর ফলে কেন্দ্রীয় বাজেটের দিনেই দেশটির অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট সামনে আসার পর গত সপ্তাহে আদানি গোষ্ঠী জানিয়েছিল, তারা এফপিও ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসবে না। সেই সঙ্গে আমেরিকার শেয়ার গবেষণা সংস্থাটিকে দেওয়া ৪১৩ পাতার জবাবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘ভারত, দেশের প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক বৃদ্ধির উপরে আক্রমণ’ বলেও তোপ দেগেছিলেন আদানিরা। যদিও সে সময় জানা গিয়েছিল, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এফপিওতে শেয়ার বিক্রির সময়সীমা বাড়ানোর বা যে দামে শেয়ার ছাড়ার কথা, তা কমানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কিন্তু সেই পূর্বাভাস খারিজ করে গত রোববার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি গোষ্ঠীর সিএফও যোগেশিন্দর সিংহ করেন, এফপিওর ক্ষেত্রে সময়সীমা বা শেয়ারের দাম বদলের কোনো সম্ভাবনা নেই। তা নির্দিষ্ট সময় অনুসারেই চলবে। পাশাপাশি, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ উড়িয়ে তার পাল্টা অভিযোগ, গবেষণা সংস্থাটি সব নথি না পড়েই রিপোর্টটি লিখেছে।
এই পরিস্থিতিতে এফপিওর সময়সীমা নিয়ে নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর পিছু হটা ‘সমস্যা গভীরতর হওয়ার বার্তা’ বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
প্রসঙ্গত, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আদানি এন্টারপ্রাইজের ওই এফপিওতে শেয়ার বিক্রি হয়েছে। কিন্তু হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট সামনে আসার পরে গত শুক্রবার প্রথম দিনে এই শেয়ার কিনতে আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র ১ শতাংশ। উল্টে শেয়ার বিক্রি ও তার দরে বিপুল পতনের জেরে লগ্নিকারীরা হারিয়েছেন প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি। আর সব মিলিয়ে বিএসইর বিনিয়োগকারীদের মুছেছে প্রায় ১১ লাখ কোটির শেয়ার সম্পদ। যা নিয়ে তদন্তে নেমেছে সেবি ও এক্সচেঞ্জগুলো। ইতোমধ্যে কারচুপির অভিযোগ ওঠা আদানি গোষ্ঠীতে এলআইসিসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও ব্যাংকের বিনিয়োগ ও ঋণ নিয়ে তোপ দেগেছে বিরোধীরা।