নভেম্বর ১৬, ২০২৪

তারা বিনিয়োগকারী নয় ফটকাবাজ , স্বল্প মেধায় না বুঝে অবিবেচকের মতো বিনিয়োগ করে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে এমন কটূক্তি বিনিয়োগকারীদের ভাগ্যে জোটা নতুন কিছু নয়। পুঁজিও হারাতে হবে আবার অপমানিত অপদস্থও হতে হবে।

বিশ্বের প্রতিটি স্টক মার্কেটে ধস আস। উর্থান পতন পুঁজিবাজারের একটি ধরণ, তাই বলে দীর্ঘ ১২ টি বছর পেরিয়ে গেলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরা যখনই পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসেন ওৎ পেতে থাকা চক্র ছো মেরে নিয়ে যায় কষ্টাজিত দেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে আসা বিনিয়োগকারীদের অর্থ। সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীরা বাধ্য হয়েই রাজপথে নেমে আসেন , নিজেদের অর্থ ফেরৎ পাওয়ার আশায় বিভিন্ন মহলে ধরনা দেন। সান্তনার বাণীর বিপরীতে উল্টো তাদের হতে হয় অপমানিত , অপদস্থ। রাবিশ , বিনিয়োগ শিক্ষা অর্জন না করেই অবুঝের মতো বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কটূক্তিও শুনতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। পুঁজিবাজারের এই করুন দশার মূলে রয়েছে মানহীন কোম্পানি লিস্টিং , অতিরঞ্জিত প্লেসমেন্ট বাণিজ্য এবং কারসাজি চক্রকে লোক দেখানো বিচারের নামে প্রশ্রয় দেওয়া।

কেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা 

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। বিনিয়োগকারীরা এখানে আসেন তাদের সঞ্চিত অর্থ বাড়াতে , বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কিনে মালিকানায় বসে বিনিয়োগের রিটার্ন বাড়াতে। সকল বিনিয়োগেরই ঝুঁকি রয়েছে , পুঁজিবাজার এর ব্যতিক্রম নয়। ঝুঁকি / রিটার্ন এর সংযোগ এবং সকল ব্যক্তিগত ঝুঁকি সহনশীলতা জানা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মোকাবেলার সহায়ক।

শেয়ারে বিনিয়োগের তিনটি মুখ্য সুবিধাসমূহ। নির্মাণ , নিরাপত্তা ও সম্পদ বৃদ্ধি।

দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি রিটার্ন নগদ বা স্থির আয়ের বিনিয়োগ যেমন বন্ড , সঞ্চয়পত্র , ফিক্সড ডিপোজিটের থেকে ভালো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ। অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি আমাদের সম্পদকে প্রভাবিত করে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বিনিয়োগকারীদের কর সুবিধে প্রদান করে যা কর এবং মুদ্রাস্ফীতির উভয়ের নেতিবাচক প্রভাবকে ধীর বা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ প্রদান করে , যা বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের রিটার্ন বৃদ্ধিতে সহায়ক।

পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে মোট জনসংখ্যার ৪% এবং আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ৫০% সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাহলে এখানে একটি বড় প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটে , আমাদের দেশের জনসংখ্যার কত শতাংশ মানুষ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলেই আমাদের বাজারের হর্তাকর্তারা পুঁজিবাজার উন্নয়নের রূপরেখা খুঁজে পাবেন বলে আশা করি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সুশাসন ,আইনের পরিপালন , সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের আস্থা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

পুঁজিবাজারে সমস্ত বিনিয়োগকারী একটি নিষ্ঠূর পরিহাসের অধীনে পরিশ্রম করে তা হল আমরা ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ভবিষ্যৎ প্রায় সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। অর্থনৈতিক মন্দা এলোমেলোভাবে আসে এবং যায়, যুদ্ধ, পণ্যের ঘাটতি এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ভূ-রাজনৈতিক উত্থান কোনো সতর্কতা ছাড়াই আসে , মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার অপ্রত্যাশিত , নির্দিষ্ট কোম্পানি এবং তাদের শিল্পের ভাগ্য প্রায়শই বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশার বিপরীতে পরিণত হয়। এ সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পুঁজিবাজারের হর্তাকর্তাদের। দেশের মানুষের সঞ্চিত পুঁজিকে মূল অর্থনীতিতে এনে সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের।

সবশেষে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের পুঁজিবাজার নিয়ে একটি কথা বলে শেষ করবো , ভারতে সরকারি ছুটি দিওয়ালিতে এক ঘন্টার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ খোলা রেখে ট্রেডিং করা হয়। মূলত এই মুহুরত ট্রেডিং দেশের অর্থনীতির চাবি কাঠি পুঁজিবাজারের এবং পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। তারা তাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের এতো কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন না , তারা আমাদের পুঁজিবাজারের মতো সাধারণ মানুষের অর্থ লুট করে উল্টো নীতি কথা শোনান না। তারা নিজেদের দেশকে যেমন ভালোবাসেন , তেমনি দেশের পুঁজিবাজারকেও ভক্তি করেন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, আহকাম এন্ড অ্যাসোসিয়েটস বিজনেস লিমিটেড
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্যাক্সসেন্স লিমিটেড

 

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...