নভেম্বর ১৬, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বিশ্ব পরিমন্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে পদক্ষেপ নেবে। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশে জোরালো উদ্যোগ নেবে যাতে, এই নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য ভুলে না যায়। আমরা যেমন আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তেমনি আমাদের সাংস্কৃতিকভাবেও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব যাতে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্ব অঙ্গনে একটি শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারে।

ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং আরেকটি উদ্বোধনের সময় সরকার প্রধান আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সংস্কৃতির আরও উন্নতির জন্য প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে কাজ করছে। নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবে আমাদের বাচ্চাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসগুলো সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। তাদের চিন্তাধারা অনুযায়ী আমাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করতে হবে যাতে তারা কখনই বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংস্কৃতির উন্নতি ও বিকাশের জন্য অতীতের ন্যায় প্রয়োজনীয় যা যা কিছু করা দরকার সে ব্যাপারে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকার ইতোমধ্যে ১৮৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতির উন্নয়নে গত সাড়ে ১৪ বছরে আরো ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি অপর ৪১টি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

কেউ যদি কোনো দেশকে ধ্বংস করতে চায় তাহলে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করবে, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। কারণ, তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও তারা মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। আমরা সবসময় আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার পাশাপাশি এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি এবং এইভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে বাঙালি জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক কাজকে রক্ষা ও সংরক্ষণ করে প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন একটি শিক্ষিত জাতি গঠনে কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার প্রধান বলেন, বিশ্ব প্রযুক্তি দ্বারা আঁকড়ে আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জাতিকে আধুনিক ও জ্ঞানভিত্তিক গড়ে তুলতে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে প্রযুক্তিকে যুক্ত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক দর্শন দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, স্বাধীন জাতি হিসেবে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হলে আমাদের দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি জাতির পিতার সাংস্কৃতিক দর্শন প্রতিষ্ঠা করা আমাদের কর্তব্য।

দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। দেশব্যাপী ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে, প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও মানুষের অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে।’

তিনি তৃণমূল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক চর্চা পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের অনেক লুকানো প্রতিভা রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে আমাদের প্রচার করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাই আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা জেলা ও উপজেলা পর্যায় ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়েও নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদার হবে এই কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং এই মানসিকতা এবং চেতনাকে আরও বিকাশের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত ও সমৃদ্ধ করতে অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।

গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের জন্য একটি নতুন বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁর সরকার আধুনিক প্রযুক্তিতে এটি নির্মাণের জন্য ৫২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কারণ, তাঁর সরকার অনেক আগেই প্রকল্পটি অনুমোদন করা সত্ত্বেও তারা এখনও ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, যেখানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমানে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা এমনভাবে মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে এর নিজস্ব স্বকীয়তা পরিবর্তন করা না যায়। তিনি রোজ গার্ডেন বাড়ির মালিক, যার কাছ থেকে সরকার এটি কিনেছিল, তাদের কাছে থাকা কাগজপত্র এবং বাড়ির নিজস্ব স্বকীয়তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন। বাড়িটি সংস্কারের প্রয়োজনে তিনি যে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত।

শেখ হাসিনা বলেন, নগর ভবনে (ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়) যে ঢাকা গ্রন্থাগারটি রয়েছে, তা রোজ গার্ডেনে স্থানান্তর করা হবে। শিশু গ্রন্থাগার সম্পর্কে তিনি বলেন, জাপানের সহযোগিতায় তাদের নিজস্ব নকশা অনুযায়ী জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে এবং গ্রন্থাগারে ৬ হাজার জাপানি বই দেওয়া হবে। জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু এবং এটি আমাদের উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী যে ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেগুলো হলো: গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের জন্য নতুন বহুতল ভবন, পুরান ঢাকা শহরের রোজ গার্ডেন, ঢাকায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভবন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমী এবং আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার। তিনি কপিরাইট ভবনের একটি নবনির্মিত ১২তলা ভবনও উদ্বোধন করেন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...