নভেম্বর ২৮, ২০২৪

সাধারণ নির্বাচনে নির্দিষ্টসংখ্যক আসন জিততে না পারলেও প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে তৎপর তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)।

জোট সরকার গঠন নিয়ে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছে পিএমএল-এন। হাতে রাখছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও। তাদের দলে টানতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে সরকার গঠনে নিজ দলে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হবেন- বড় ভাই নওয়াজ নাকি শাহবাজ শরিফ এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি পিএমএল-এন।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এ খবর জানিয়েছে।

২৬৬ আসনের জাতীয় পরিষদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলেও ৭৯ আসন নিয়ে দলীয় পর্যায়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে পিএমএল-এন। পাকিস্তানে সরকার গঠনের জন্য একটি দলের ১৩৪টি আসন পেতে হয়। এক্ষেত্রে পিএমএল-এন এর ওই সংখ্যক আসন নেই। তাই জোট সরকার গঠনের জন্য পিপিপির সঙ্গে একাধিক বৈঠক করছে পিএমএল-এন।

এ বিষয়ে সোমবার উভয়পক্ষের প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক আলাপ আলোচনাও হয়েছে।

জাতীয় পরিষদ ও পাঞ্জাবের বিধানসভায় ক্ষমতা ভাগাভাগি করা বা শেয়ারিং ফর্মুলায় কাজ করার চেষ্টা করছে উভয়পক্ষ। তবে এ ফর্মুলায় সরকার গঠন আদৌ সম্ভব কিনা বা সরকার গঠন হলেও তা কতটা শক্তিশালী হবে, এ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

এদিকে পিএমএল-এনের শর্ত মোতাবেক জোট সরকার গঠনে পিপিপি রাজি হলে দলটির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন- এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি তারা। দলটির একটি অংশ মনে করছে তাদের সর্বোচ্চ নেতা নওয়াজ শরিফ রেকর্ড চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আকর্ষণীয় পদপ্রার্থী হবেন।

এ বিষয়ে একটি সূত্র ডনকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে নওয়াজ শরিফকে এখনো খারিজ করা হয়নি। দলের ওই অংশটির মতে, নির্বাচনের আগে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন নওয়াজ। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি অপ্রত্যাশিত ফলাফল এ বিষয়ে তাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করেছে। এছাড়া নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নওয়াজের পরিবর্তে তার ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের নামটি দলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সোমবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করেনি পিএমএল-এন। জোটের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে এবং তাদের পরামর্শ নিয়েই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে, সামা টিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দলীয় নেতা খাজা আসিফ বলেছিলেন, বড় ভাই নওয়াজ নয়, বরং শাহবাজই পিএমএল-এনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন। পরে অবশ্য এটি তার ব্যক্তিগত মতামত বলে স্পষ্ট করেছিলেন তিনি।

সূত্রমতে, দলের মধ্যে থাকা একটি উপদল মনে করছে- কেন্দ্র এবং বৃহত্তম প্রদেশ উভয় ক্ষেত্রেই সুশাসনের স্বার্থে নওয়াজ শরিফের সরকার পরিচালনা করা উচিত এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী করা উচিত শাহবাজকে।

অভ্যন্তরীণ ওই সূত্র বলেছেন, পিপিপির সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এবং বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারির সঙ্গে শেহবাজ শরিফের বৈঠকের সময় ক্ষমতা ভাগাভাগি ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম নিয়ে নয়।

সূত্রটি জানিয়েছে, দুটি সম্ভাব্য বিষয় নিয়ে পিএমএল-এন এবং পিপিপির মধ্যে একটি অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে। প্রথমত, পিপিপি বিলাওয়ালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ দাবি করলে এবং দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নওয়াজের নাম নিয়ে দলটি একমত না হলে।

নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচন না করলে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য তার মেয়ে মরিয়ম ‘শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী’ হয়ে উঠবেন।

এছাড়া সোমবার পিএমএল-এনে যোগ দেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দশটি নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মরিয়ম আওরঙ্গজেব। তাদের মধ্যে দুইজন এমএনএ-নির্বাচিত এবং আটজন এমপিএ-নির্বাচিত।

সূত্রগুলো জানায়, পাঞ্জাবে পিপিপির ওপর নির্ভর না করে সরকার গঠনের লক্ষ্যে স্বতন্ত্রদের একত্রিত করতে যথেষ্ট চেষ্টা করছে পিএমএল-এন।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...