সূর্যের তাপ বেড়ে গিয়ে দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। যেন ভরা গ্রীষ্মের গরম নেমেছে। বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু আর লঘুচাপের কারণে বিপুল পরিমাণে মেঘমালা ভেসে আসছে। যেন আকাশের দখল নিয়ে যেন মেঘ ও রোদের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন বাংলাদেশের প্রকৃতিতে রোদ আর মেঘের লড়াই চলতে পারে। ফলে দেশের কোথাও তাপপ্রবাহ আর কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি দুই-ই চলতে পারে। সাগরে লঘুচাপ থাকায় সেখানেও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। তবে আগামী কয়েক দিন মেঘ বেড়ে গিয়ে বৃষ্টির দাপট বাড়তে পারে।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে এরই মধ্যে উপকূলে দমকা বাতাস ও মেঘমালার আনাগোনা বেড়ে গেছে। ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এ আশঙ্কায় দেশের সব কটি বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থান করা নৌযানগুলোকে উপকূলে কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
আজ রোববার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
তাপমাত্রা নিয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়া জেলাসহ রংপুর ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
সিনপটিক অবস্থায় বরা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে প্রথমে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পরবর্তীতে দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজ ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৬৯ শতাংশ। বায়ু দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, দেশের বিভিন্ন যে স্থানে তাপপ্রবাহ চলছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে দু-এক দিনের মধ্যে বৃষ্টি বাড়লে তাপপ্রবাহ কমে আসতে পারে। আর বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপটি খুব বেশি শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা নেই। এটি দ্রুত ভূমিতে উঠে বৃষ্টি ঝড়িয়ে শেষ হয়ে যেতে পারে।
গতকাল দেশের সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা ছিল নীলফামারীর ডিমলা। সেখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮। আর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে টেকনাফে ৬৯ মিলিমিটার।