পুঁজিবাজারে নতুন তহবিল সরবরাহের জন্য রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করতে চাইছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সম্প্রতি তহবিল ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে এই সংস্থা।
গত ২৩ জানুয়ারি, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটি এ বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “অর্থ ও পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণের পর কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর রাইট শেয়ার ইস্যু করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”
তিনি বলেন, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অংশ হিসেবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
“বাজার যাচাই ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কারণ, শেয়ার সাবস্ক্রাইব হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নেই,” যোগ করেন তিনি।
রাইট শেয়ার ইস্যুর অর্থ হলো, বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদেরকে কোম্পানিতে অতিরিক্ত নতুন শেয়ার কেনার আমন্ত্রণ জানানো। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের সিকিউরিটিজ মঞ্জুর করা হয়, যাকে বলা হয় ‘রাইটস’। রাইটস-এর মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডাররা নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বাজার মূল্য থেকে ডিসকাউন্টে বা কম দামে নতুন শেয়ার কিনতে করতে পারেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, আইসিবির বোর্ড সভায় রাইট শেয়ার ইস্যু করার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। এরপর কর্পোরেশন এই বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে একটি আবেদন জমা দেবে।
তারা জানান, রাইট শেয়ার থেকে সংগৃহীত তহবিল পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবহার করবে আইসিবি। বর্তমানে, রেগুলেটরদের দ্বারা আরোপিত ফ্লোর প্রাইস সীমাবদ্ধতার কারণে সংস্থাটি তার শেয়ার বিক্রি করতে পারছে না।
চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে, অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, শেয়ার বিক্রি করে মূলধন অর্জনে ব্যর্থ হয় আইসিবি। এর ফলে সংস্থাটির মুনাফা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।
এদিকে, খারাপ বিনিয়োগের কারণে কর্পোরেশনের প্রায় ৬৬৭ কোটি টাকা বিভিন্ন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে।
মোঃ আবুল হোসেন বলেন, “কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সুদ পরিশোধ করে চুক্তি নবায়ন করেছে এবং কিছু কোম্পানি এখনও তা করতে পারেনি। আমরা মূলধন উদ্ধারের চেষ্টা করছি।”
ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়ালস সলিউশনের (ইউএফএস) মালিক প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ায় আইসিবি পড়েছে আরও এক বিপাকে।
সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, আইসিবি ইউএফএস সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির অধীনে তিনটি মিউচুয়াল ফান্ডে ৪৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।
২০১৪ সালে, রাইট শেয়ার ইস্যু করে ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল আইসিবি।
তখন প্রতি দুই শেয়ারের বিপরীতে একটি রাইট শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল। প্রতিটি শেয়ার ইস্যু করা হয়েছিল ৫০০ টাকায়, এরমধ্যে ইস্যু মূল্য ছিল ১০০ টাকা এবং প্রিমিয়াম ছিল ৪০০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, “বাজারে তারল্য বাড়াতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন। এতে আইসিবির সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে কমিশন ইতিবাচকভাবে রাইট শেয়ার ইস্যু করার পরিকল্পনা করছে।”
এক্সপোজার লিমিটের বাইরে আমানত তহবিল
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে টার্ম ডিপোজিট (মেয়াদি আমানত) আকারে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে আইসিবি, যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এক্সপোজারে হিসাব করা হয়।
সম্প্রতি তহবিল সংকটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংককে টার্ম ডিপোজিটগুলো এক্সপোজারের বাইরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে আইসিবি।
এ সুবিধা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইসিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
মোঃ আবুল হোসেন বলেন, “আমানত তহবিল এক্সপোজারের বাইরে রাখলে ব্যাংকগুলো আইসিবিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। এবং তহবিল পাওয়া গেলে আইসিবি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে পারবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও এক হাজার কোটি টাকা চেয়েছে আইসিবি।”
আইসিবির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত, কর্পোরেশন বিভিন্ন ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মেয়াদি আমানত হিসেবে ৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম।
ক্যাপিটাল গেইন বা মূলধন থেকে লাভ কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে আইসিবির মুনাফা ৬৭ শতাংশ কমে ৪৬.৫০ কোটি টাকায় ঠেকেছে।।
আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ১৪০.০৮ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে শেয়ার থেকে সংস্থাটির ক্যাপিটাল গেইন ৫৯ শতাংশ কমে ২০৮.৬১ কোটি টাকা হয়, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫১২.৩১ কোটি টাকা।