চলতি মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১০ মামলায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে একজন সাংবাদিক, একজন বিএনপি কর্মী, একজন আওয়ামী লীগ কর্মী, একজন অভিনেত্রী, দুজন যুবক ও একজন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) সংস্থার সভাপতি সুলতানা কামালের সই করা মার্চ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা ছিল পাঁটটি। ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই আইনে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে একজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া সরকারি কর্মচারী এক নারী র্যাব হেফাজতে মারা যান। এসব মামলার সাতটি হয়েছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এ ধরনের সমালোচনামূলক পোস্ট বা শেয়ার অথবা কমেন্ট করার কারণে। এছাড়া প্রতারণার অভিযোগে দুটি, জনমনে ভীতি প্রদর্শন, জনমনে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কথিত অপরাধে একটি মামলা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে এমএসএফ বলছে, এ আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে মতামত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করা ও ভয় দেখানো এবং সবার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একটি ভয়ংকর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
সংস্থাটি জানায়, চলতি মাসে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক নানাভাবে অপমান, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান ছাড়া আরও তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে মার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের মানবাধিকার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশের গাড়িতে করে নরসিংদী কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পথে সিরাজ মিয়া ও ২২ মার্চ সকালে নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয়। এ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তিনজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমএসএফ জানায়, বিরোধীদলীয় কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বল প্রয়োগ ও বাধাদান অব্যাহত ছিল। এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা-সমাবেশে বাধার ৩১টি ঘটনায় ৩৮৫ জন আহত ও পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বে ও দুজন ইউপি নির্বাচনী সহিংসতায় মারা গেছেন।
এ মাসে পাচটি রাজনৈতিক মামলার মধ্যে বিএনপির বিরুদ্ধে দুটি, তিনটি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭০ জন রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে ১১২ জন বিএনপি ও ৫৮ জন জামায়াতে ইসলামীর কর্মী রয়েছেন। মার্চে কারা হেফাজতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এই সংখ্যা ছিল পাঁচটি। এ মাসে তিনজন হাজতি ও তিনজন কয়েদির মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, তাদের পরিচয়ে অপহরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে মতামত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। এ মাসে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা জনমনে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। গণপিটুনির মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় এমএসএফ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে।