বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ৭০ দশমিক ৮০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি সন্তুষ্ট নয়। আগামীতে বাংলাদেশে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। এ জন্য ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি করতে হবে বলে তারা জানিয়েছে।
জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমন ৭৪টি কোম্পানি তাদের মতামত দিয়েছে।
বুধবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স (এমসিসিআই) ঢাকা এবং জেট্রো আয়োজিত আলোচনা সভায় জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জাপানি কোম্পানি বলেছে, বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশে তারা অসন্তুষ্ট। ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছে, তারা কিছুটা অসন্তুষ্ট। ব্যবসা পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি আছে এমন কোম্পানি ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই এবং জেট্রো আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।
ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও জেট্রোর জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে থাকা জাপানি কোম্পানিগুলোর ৭১ দশমিক ৬০ শতাংশ আগামী এক থেকে দুই বছরে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী। জাপানি ব্যবসায়ীদের এমন মনোভাবের ক্ষেত্রে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। তবে বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে আছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। জাপানি কোম্পানিগুলোর ৭২ শতাংশ ভারতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়।
জরিপের তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশে জেট্রোর প্রতিনিধি ইউজি আন্দো ব্যবসার পরিবেশের উন্নতির আহ্বান জানান। পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা সহজ ও দ্রুত করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষর হলে তা উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় ব্যবসার উন্নতিতে সহায়তা করবে।
দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান বিষয়ে বিডা কাজ করছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিঞা। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা সহজীকরণের নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ উন্নত হলে এবং বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হলে ২০৩০ সালের মধ্যে জাপানে বাংলাদেশের রপ্তানি ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মুনাফা নিজ দেশে নিতে আইনি ব্যবস্থা আরও সহজ করা দরকার বলে মত দেন তারা।
এমসিসিআই সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ জাপানি কোম্পানিগুলোর আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে সাড়ে তিনশ জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ ৩৮ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালেই ১০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে তারা। তিনি এখানকার ব্যাকওয়ার্ড এবং ফরোয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে জাপানিদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ব্যবসা পরিবেশের উন্নতির জন্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ সংলাপ আয়োজনে একটি কর্মকৌশল গ্রহণের ওপর জোর দেন। বাংলাদেশে তাঁর দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
আলোচনায় এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে এ সংক্রান্ত আইন ও নিয়ন্ত্রণমূলক কাঠামোগত ব্যাপক পরিবর্তন দরকার। বিশেষ করে ব্যবসার খরচ ও সময় কমানোর দিকটি বিবেচনার ওপর জো
র দেন তিনি।