চলতি বছরের জুলাই মাসে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) লেনদেন আগের মাসের তুলনায় ২১ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এর আগের মাসে লেনদেন হয়েছিলো ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ৩২ হাজার ৯১২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বা ২১ দশমিক ১২ শতাংশ কমেছে।
এই লেনদেনের মধ্যে গ্রাহকরা ক্যাশ ইন করেছেন ৩৫ হাজার ৩৩৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ক্যাশ আউট করেছেন ৪০ হাজার ১১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা এবং ব্যক্তিগত লেনদেন হয়েছে ৩১ হাজার ৭১১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এছাড়া মার্চেন্ট পেমেন্ট হয়েছে ৬ হাজার ৪৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গেছে ৪৬০ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এর বাইরে জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৭১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ১০৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার টকটাইম কেনা হয়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবা প্রায় অচল হয়ে পড়েছিলো। আলোচিত এ মাসে বেশ কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় অ্যাপের মাধ্যমে এখন ব্যাংক থেকে এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়া পুরোপুরি বন্ধ ছিলো। কারও এমএফএস অ্যাকাউন্টে টাকা থাকলেও অনেক ধরনের বিল ইন্টারনেট ছাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছিলো না। অনেক এজেন্ট পয়েন্ট থেকে ক্যাশ ইন বা ক্যাশ আউট করতে পারছিলো না। এর ফলে এ সেবায় ব্যাপক ভোগান্তি তৈরি হয়েছিলো। এজন্য জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে বলে মনে করছেন তারা।
চলতি বছরের জুলাই শেষে মোট মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৬টি। এর একমাস আগে যার সংখ্যা ছিলো ২৩ কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ২০৬টি। অর্থাৎ জুলাই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৭ লাখ ৯ হাজার ৬৫০টি বা শূণ্য দশমিক ৩০ শতাংশ।
দেশে বর্তমানে নগদ, বিকাশ, রকেট, উপায়, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ১৩টি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান এমএফএস এ সেবা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত হিসাবের মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৩৩ ও নারী ৯ কোটি ৭১ লাখ ৮ হাজার ৪৮০ জন। আলোচ্য সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৪টি।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। এছাড়াও নগদ সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দিচ্ছে।