জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তায় নির্মিত দেয়াল ভাঙ্গাকে কেন্দ্র করে ৩ হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাত ৭টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষে জড়ানো হল তিনটি হলো- শহীদ রফিক জব্বার হল, শেখ রাসেল হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল।
গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ওই রাস্তায় স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করেন শহীদ রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। ৪ দফা দাবিতে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ওই দেয়ালটি নির্মাণ করা হয়। তাদের দাবিগুলো হলো- শহীদ রফিক জব্বার হলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও খেলার মাঠ নির্দিষ্টকরণ, হলের সকল অব্যবস্থাপনা দূর করে স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা সংস্কার ও হলের মসজিদে স্থায়ী ইমাম নিয়োগ, ডাইনিংয়ের অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ ও কমনরুমের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত এবং হলের সামনে দিয়ে তাজউদ্দীন আহমদ হল ও শেখ রাসেল হলের বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, শহীদ রফিক জব্বার হল সংলগ্ন রাস্তায় স্থায়ী দেয়াল নির্মাণের ফলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াতে অসুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে সোমবার থেকে দেয়ালটি ভাঙ্গার দাবিতে গণস্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি শুরু করে দুই হলের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দেয়ালটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি অঙ্কনের চেষ্টা করে রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থীরা দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি অঙ্কনে বাধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে শেখ রাসেল ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের শিক্ষার্থীরা মিলে রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা ভেতরে চলে যায়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক দফায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পটকা ফুটানো ও পাল্টাপাল্টি ধারওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখা যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রফিক জব্বার হলের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রেজাউল ও নিশাত গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকিদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ রাসেল হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অলক কুমার পাল বলেন, হল সংলগ্ন রাস্তায় স্থায়ী দেয়াল নির্মাণের ফলে অন্তত ১ কিলোমিটার পথ ঘুরে দুই হলের শিক্ষার্থীদের বটতলায় খাবার খেতে যেতে হয়। এর পাশাপাশি ক্লাস করতে যাওয়াসহ বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে এ ভোগান্তি লাঘবের জন্য আমরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে দেয়াল ভাঙ্গার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু দেয়ালটি যাতে ভাঙ্গা না যায় সেজন্য রফিক জব্বার হলের শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আঁকা শুরু করে। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি, অনতিবিলম্বে দেয়ালটি ভেঙ্গে দুই হলের ভোগান্তি কমাতে হবে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা মহিবুর রহমান শুভও একই দাবি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করছি। তবে পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নেব।