পরিত্যাক্ত ঘোষণার ৩০ বছর পর সিলেট-৭ নম্বর গ্যাসকূপ সংস্কারের সময় নতুনভাবে গ্যাস ও জ্বালানী উত্তোলন শুরু হয়েছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয় সিলেট-৭ নম্বর গ্যাসকূপকে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হলো দৈনিক ৮০ লাখ ঘনফুট গ্যাস।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, দুপুরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড ইতিমধ্যে জাতীয় গ্রিডে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে আসছে এবং আজ থেকে সেই পরিমাণ আরও বাড়ল।
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ১৯৮৬ সালে সিলেট-৭ নম্বর গ্যাসকূপ থেকে গ্যাসের পাশাপাশি দেশের প্রথম জ্বালানী উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৪ সালে কূপটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের জুলাই থেকে বাপেক্স এই কূপের খনন কাজ শুরু করে। ২২ অক্টোবর গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর সোমবার জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়।’
সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানির ১৫তম গ্যাস কূপ সিলেট-৭ নম্বর কূপ থেকে ১৫-২০ বছর গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। কূপে ৯৪ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত আছে। কূপ থেকে দৈনিক চার লাখ টাকার কনডেনসেট এবং ৫০ কোটি টাকার গ্যাস উত্তোলন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরাতন গ্যাসকূপ সিলেট-৭ নম্বরে জুলাই মাস থেকে অনুসন্ধান চলে। গত ১৪ অক্টোবর কূপের ২০১০ মিটার গভীরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান মেলে।
এরপর ২২ অক্টোবর ওই কূপের ১২০০ মিটার গভীরে আরও সাড়ে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই টেস্ট হিসেবে এক সপ্তাহ গ্যাস উত্তোলন করা হয়। পরবর্তীতে ওই কূপ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৮৬ সালে জৈন্তাপুরের হরিপুর সিলেট-৭ নম্বর কূপে তেল উত্তোলন শুরু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তেল উত্তোলন করা হয়। এরপর তেল উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে ওই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হয়।
এবার পুরোনো কূপে দুটি লেয়ারে গ্যাসের সন্ধান মেলে। সিলেট থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়ে আসছিল। এখন সেটি আরও বাড়ছে।
সিলেটে ১৪টি কূপে খনন ও গ্যাস উত্তোলন করে দেশীয় তেল গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানি বাপেক্স। এরমধ্যে জৈন্তাপুরের হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে দুটি কূপে, গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা তিনটিতে, রশিদপুর সাতটি ও বিয়ানীবাজার দুটি কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন অব্যাহত আছে।
এরমধ্যে জৈন্তাপুরের হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে ১৯৫৫ সালে নয়টি কূপে পরীক্ষা চালিয়ে দুটিতে গ্যাস পাওয়া যায় এবং ১৯৬১ সালে এই কূপ দুটি উৎপাদনে যায়। গোলাপগঞ্জের কৈলাশটিলা ১৯৬২ সালে সাতটি কূপে পরীক্ষা চালিয়ে তিনটিতে গ্যাসের সন্ধান মেলে এবং ১৯৮৩ সালে উৎপাদনে যায়। রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডে ১৯৬০ সালে ১১টি কূপ খনন করে সাতটিতে গ্যাস উৎপাদনে যায় ১৯৯৩ সালে। বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডে ১৯৮১ সালে দুটি কূপ খনন করে দুটিতেই গ্যাসের সন্ধান মেলে এবং ১৯৯৯ সালে উৎপাদনে যায়।