নভেম্বর ২৩, ২০২৪

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করে বলেন, চীনের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সংঘাত বা স্নায়ুযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র এড়াতে চায়। বেইজিংয়ের সাথে সংঘাত বা শীতল যুদ্ধ এড়াতে চায় ওয়াশিংটন।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বাইডেন এই মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এবারই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করলেন জো বাইডেন। এর আগে উভয় নেতা পাঁচবার ফোন বা ভিডিও কলে কথা বলেছেন। আর সোমবারের আগে এই দুই নেতার সামনা-সামনি দেখা হয়েছিল ওবামার শাসনামলে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন।

বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতার বৈঠকের পর তাদের কার্যালয় থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে উভয় নেতা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণ ত্রাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ আন্তঃজাতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটাই প্রত্যাশা করে।’

অন্যদিকে সরকারি চীনা বার্তাসংস্থা সিনহুয়াও প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বিশ্ব শান্তির জন্য আরও আশা, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর বৃহত্তর আস্থা এবং অভিন্ন উন্নয়নে শক্তিশালী প্রেরণা আনতে উভয় পক্ষের সকল দেশের সাথে কাজ করা উচিত।’

সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সোমবার ইন্দোনেশিয়ার বালিতে মুখোমুখি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বৈঠকে দুই নেতাই ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছেন।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বালিতে উপস্থিত হওয়া বাইডেন এবং জিনপিংয়ের মধ্যে এই বৈঠক তিন ঘণ্টা ধরে চলে। সাক্ষাতের শুরুতে দুই নেতা সাংবাদিকদের সামনে হাসিমুখে করমর্দন করেন। এ বৈঠকের ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্প্রতি শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ক অন্তত কিছুটা উষ্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে, কিন্তু তা সংঘাতে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে শি জিনপিংও এ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে একমত হন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কখনোই হওয়া উচিত নয়।

এছাড়া বাইডেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনও নতুন স্নায়ু যুদ্ধ শুরু হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি ও শি জিনপিং পরস্পরকে বোঝেন এবং বেইজিং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে দিতে চায় না।

বৈঠকের সময় তিনি চীনের জিনজিয়াং ও তিব্বত অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাইওয়ানের ব্যাপারে চীন যে ‘জবরদস্তিমূলক এবং আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে তারও বিরোধিতা করেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেন যথাযথভাবে রক্ষিত হয় তা সারা বিশ্ব প্রত্যাশা করে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈঠকে শি জিনপিং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাইওয়ানের অবস্থান চীনের স্বার্থের কেন্দ্রস্থলে।

শি জিনপিং বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চান। তার ভাষায়, ‘গোটা বিশ্ব প্রত্যাশা করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এই সম্পর্ককে যথাযথভাবে রক্ষা করবে। আমাদের এ বৈঠক বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বিশ্বশান্তির জন্য আমাদেরকে সবদেশের সাথে মিলে কাজ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এ বৈঠকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর খোলাখুলি মতামত বিনিময় করা প্রয়োজন।’

প্রেসিডেন্ট শি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন এমন একটি অবস্থায় আছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে দুই দেশের নেতা হিসেবে তাদের ‘সঠিক গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে’। তার ভাষায়, ‘আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আগামী দিনে সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং উন্নত করার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে হবে।’

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...