

দামে লাগাম টানতে সব ধরনের চিনি আমদানিতে শুল্ক অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গতকাল বুধবার সংস্থাটি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। তবে শুল্ক কমানোর দিন বাজারে উল্টো বেড়েছে চিনির দাম। পাইকারি পর্যায়ে বস্তায় (৫০ কেজি) বেড়েছে ১০০ টাকা। এ ছাড়া নতুন করে মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা পেঁয়াজ ক্রেতার দুশ্চিন্তা আরও বাড়াচ্ছে।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা গেছে, প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক তিন হাজার থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ছয় হাজার থেকে কমিয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। এ শুল্কহার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, শুল্ক কমানোর কারণে বাজারে দাম না কমলেও অন্তত স্বাভাবিক থাকার কথা। পাইকারিতে উল্টো প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাবে খুচরা বাজারেও দাম বাড়তি।
সরকার ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যতবারই চিনির দর নির্ধারণ করে দিয়েছিল, তা একবারও কার্যকর হয়নি। প্রায় আড়াই মাস আগে খোলা চিনির কেজি ১৩০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, হাতিরপুল বাজারে দেখা গেছে, খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়; যা সপ্তাহখানেক আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। তবে প্যাকেট চিনির সরবরাহ একেবারেই কম।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের মালিহা স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. রিয়াজ বলেন, ‘চিনির দাম কয়েক দিন ধরে বাড়তি। নতুন করে আজ (গতকাল) পাইকারিতে বস্তায় ১০০ টাকা বেড়ে গেছে। ৮-১০ দিন আগে প্রতি বস্তা কিনেছি ৬ হাজার ২৬০ থেকে ৬ হাজার ৩৫০ টাকায়। এখন কিনতে হচ্ছে ৬ হাজার ৪৫০ টাকায়।’
বাজারে নতুন করে সব ধরনের ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি চাহিদা মসুর ডালের। আগের সপ্তাহে মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছিল ১০ টাকা। বড় দানার মসুর ডালের কেজি ১১০ থেকে ১১৫ এবং ছোট দানার মসুর ডালের কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সপ্তাহখানেক আগে যথাক্রমে ১০০ ও ১৩০ টাকার মধ্যে কেনা যেত। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়। অ্যাঙ্কর ও খেসারি ডাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৫ থেকে ৭০ এবং ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
সরকার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ৬৫ থেকে ৬৬ নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে তা অকার্যকর। ভারত রপ্তানিমূল্য বেঁধে দেওয়ায় দেশে টানা চার দিন ঊর্ধ্বমুখী ছিল পেঁয়াজের বাজার। এ সময় কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গতকাল ঢাকার খুচরা বাজারে বেশির ভাগ দোকানে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা দরে। আবার মহল্লার কোনো কোনো দোকানে এরচেয়েও বেশি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে কমবেশি ১২০ টাকা কেজি দরে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সবজির বাজার চড়া। অবরোধে নতুন করে দাম না বাড়লেও এখনও আগের চড়া দামের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে বাজারে সবজির সরবরাহ খুব বেশি দেখা যায়নি। ক্রেতাও ছিল কম।
সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের কারণে সবজির ট্রাক তুলনামূলক কম আসছে। ক্রেতা কম থাকায় চাহিদায় টান পড়েনি। তাই দাম নতুন করে বাড়েনি। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘অবরোধের কারণে বাজারে ক্রেতা কম। সবজিও
কম আসছে।’