সারাদিন অফিস শেষে সন্ধ্যায় বাসা ফিরে দেখেন, চুলা জ্বলছে মিটিমিটি। ডিম ভাজি, বেগুন ভাজি আর ডাল রান্নায় লেগেছে তিন ঘণ্টা। ভাত তখনও চুলায়। এমন পরিস্থিতিতে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়লেন রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মাসুদা।
তিনি লিখেন, বছরের পর বছর ধরে গ্যাসের এমন দশায় তিনি অভ্যস্ত। মাস শেষে শুধু গ্যাস বিল দেন। তাঁর কমেন্টে মৌসুমী নামে একজন জবাবে বলেন, সারাদিনই তো গ্যাস থাকে না। সন্ধ্যায় ভাত রেঁধেছি রাইস কুকারে। শুধু মাসুদাই নন; ফেসবুকজুড়েই গত কয়েক দিন গ্যাস নিয়ে হাহাকারের চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেকেই তাঁকে পরামর্শ দেন সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের।
এমন পরিস্থিতিতে খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাসের উৎপাদন না বাড়লে চলমান সংকটের সমাধান হবে না। কারণ এলএনজি দিয়ে ঘাটতি খুব বেশি পূরণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের যে গতি, তাতে আগামী ৭-৮ বছরের আগে গ্যাসের উৎপাদন তেমন বাড়বে না।
জানা গেছে, শীতের তীব্রতার সঙ্গে রাজধানীতে বেড়েছে গ্যাস সংকট। ঢাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে না। প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাবু নগরবাসীকে ভুগতে হচ্ছে রান্নাবান্না নিয়েও। পানি গরম করার মতোও গ্যাস আসছে না লাইনে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দু’মাস ধরে গ্যাসের ভয়াবহ সংকট চলছে। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ করছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দিন দিন উৎপাদন কমছে। এলএনজিতে রূপান্তরের দুটি টার্মিনালের একটি মেরামত কাজের জন্য দু’মাস বন্ধ থাকায় এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শীতের তীব্র ঠান্ডা। এই ঠান্ডায় লাইনে গ্যাস জমে সংকট বেড়েছে। পাশাপাশি এলএনজিতে রূপান্তরের দুটি টার্মিনালের একটি মেরামত কাজের জন্য দু’মাস বন্ধ থাকায় এলএনজি সরবরাহ কমে গেছে।
বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহ থেকে এলএনজি টার্মিনালটি চালু হবে। এর ফলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। সংকটও খানিকটা কাটবে।
তবে খাত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এলএনজি থেকে সরবরাহ বাড়লেও আবাসিক ও শিল্পে গ্যাসের ঘাটতি তেমন কমবে না। কারণ সেচ মৌসুম শুরু হচ্ছে। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বাড়তি গ্যাস দিতে হবে। তাই শিগগিরই গ্যাস সংকট কাটবে না। তাদের মতে, এলএনজি বেশি আমদানি করে আর দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়েই শুধু গ্যাস সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব।
সূত্রমতে, ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে গতি কম। স্থলভাগে কিছু কূপ খননের উদ্যোগ নিলেও সমুদ্র অনুসন্ধান ৬-৭ বছর ধরে শুরুই করতে পারেনি সরকার। ফলে অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন খুব বেশি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।
বর্তমানে দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৫৫ কোটি ঘনফুট। ঘাটতি প্রায় ১৬৫ কোটি ঘনফুট। এলএনজি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট।