নভেম্বর ১৮, ২০২৪

দেশের প্রথম ও প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লিমিটেড ৭০ বছরে পা রাখলো। ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড নামে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আনুষ্ঠানিক লেনদেন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। ১৯৬২ সালের ২৩ জুন নাম পরিবর্তন করে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড করা হয়। ১৯৬৪ সালের ১৩ মে ওই নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ডিএসইতে লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। ১৯৭৬ সালের ১৬ আগস্ট লেনদেন পুনরায় চালু হয় এবং অদ্যাবধি লেনদেন ও উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বমানের সেবা ও স্টেকহোল্ডারদের সর্বোচ্চ আস্থা নিশ্চিত করে এ অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ (শেয়ার, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ট্রেজারি বন, ডিবেঞ্চার ও কর্পোরেট বন্ড) লেনদেন হয়ে থাকে।

ডিএসইর উদ্দেশ্য হচ্ছে—ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে দক্ষতা এবং নতুন পণ্য প্রবর্তনের মাধ্যমে সেবা প্রদানের সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ, সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখা, সমৃদ্ধ ও প্রবহমান বাজারের মাধ্যমে মূলধন যোগান নিশ্চিত করা; বিনিয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, কর্তৃপক্ষ ও বাজারে মধ্যস্থতাকারীর আস্থা অর্জনের লক্ষ্য প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিত করা।

ডিএসই লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুবিধা প্রদানকারী হিসেবে অন্যান্য মূল্য সংযোজন পরিষেবা এবং প্ল্যাটফর্ম দিয়ে থাকে। এসবের মধ্যে আছে—বাজার নজরদারি, মাসিক রিভিউ প্রকাশনা, লিস্টিং রেগুলেশন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ সেল, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা তহবিল, অনলাইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সম্পর্কে মূল সংবেদনশীল বা অন্যান্য তথ্যের ঘোষণা, ট্রেক লাইসেন্সিং ও পরিষেবা, বিনিয়োগকারী ও বাজার মধ্যস্ততাকারীদের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও স্বক্ষমতা তৈরি, মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করার জন্য মোবাইল অ্যাপসহ বেশকিছু সুবিধা।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান মার্কেটের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ৬৫৪টি সিকিউরিটিজ লেনদেন করছে। এর মধ্যে কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৩৫৫টি, মিউচুয়াল ৩৬টি, ডিবেঞ্চার ৮টি, সরকারি বন্ড ২৪৫টি এবং কর্পোরেট বন্ড রয়েছে ১০টি। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ডিএসইর বাজার মূলধন এবং দেশের মোট জিডিপিতে অনুপাত ১৩.২০ শতাংশ।

বর্তমানে ডিএসইর এসএমই মার্কেটের বাজার মূলধন ১ হাজার ৬৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বর্তমানে এ মার্কেটে ১৫টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করছে। সেই সঙ্গে চলতি বছরেই ডিএসই এটিবি মার্কেট চালু করেছে। বর্তমানে এ মার্কেটে একটি সিকিউরিটিজ লেনদেন করছে।

এদিকে, ডিএসই প্রতিষ্ঠার শুরুতে অনুমোদিত মূলধন ছিল ৩ লাখ রুপি, যা ১৫০টি শেয়ারে বিভক্ত ছিল এবং প্রতিটির মূল্য ছিল ২ হাজার রুপি। ১৯৬৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ সাধারণ সভায় এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত মূলধন বৃদ্ধি করে ৫ লাখ রুপি করা হয়, যা ২ হাজার রুপি মূল্যমানের ২৫০টি শেয়ারে বিভক্ত ছিল।

১৯৯৮ সালের ১০ আগস্ট স্টক এক্সচেঞ্জে স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং পদ্ধতি চালু হয় এবং নতুন পরিসরে প্রবেশ করে আধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক ট্রেডিং পদ্ধতি। ২০০৪ সালের ২৪ জানুয়ারি স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসে। শেয়ারকে ইলেকট্রনিক শেয়ারে রূপান্তরিত করে নতুন ও আধুনিক লেনদেন পদ্ধতি সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সিস্টেমের সাথে যুক্ত করা হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের এই অগ্রযাত্রা, সাধারণ জনগণের অর্জিত সঞ্চয়কে বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল স্রোতে আনয়নের অন্যতম এক মঞ্চে পরিণত হয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর ডিএসই ডিমিউচু্য়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ হিসেবে ২৫০ কোটি শেয়ারে বিভক্ত প্রতিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন ও ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ঢাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০১৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত নাসডাক ও ফ্লেক্সট্রেডের ট্রেডিং ইঞ্জিন ও ওএমএস স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বিরতিহীনভাবে প্রতি সেকেন্ডে ২ হাজার অর্ডার এবং ১ হাজার লেনদেনের ক্ষমতাসম্পন্ন এক্সট্রিম আইনেট ম্যাচিং ইঞ্জিন এবং ফ্রেক্সটিপি অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ওএমএস) চালু করা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর আইএসও সার্টিফিকেট বা প্রমাণপত্র প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এসজিএস লিমিটেড ডিএসইকে আইএসও ১০০১: ২০০৮ প্রদান করে। এছাড়া, সফল সমাপ্তি এবং আইএসও ৯০০১: ২০০৮ যথাযথভাবে বজায় রাখার জন্য এসজিএস উক্ত মানকে ৯০০১: ২০১৫ এ উন্নীত করে।

২০১৭ সালের ৬ জুন ডিএসই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জেসের (ডব্লিউএফই) পূর্ণ সদস্য পদ অর্জন করে ডিএসই, যা এর ভাবূর্তিকে বিশ্বব্যাপী উজ্জ্বল করেছে। ২০১৮ সালের ১৪ মে এক্সচেঞ্জেস ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের সঙ্গে শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ (এসজেডএসই) এবং সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের (এসএই) কনসোর্টিয়াম কৌশলগত অংশীদার হিসেবে শেয়ার ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ডিএসই’র ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত অংশীদারদের কাছে হস্তান্তরিত হয়।

১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৩ জন ব্যক্তি ডিএসইর চেয়ারম্যান বা প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ডিএসইর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। চলতি বছরের গত ৫ মার্চ ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের ১০৫৪তম সভায় তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন৷ এছাড়াও তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট সদস্য এবং বাংলাদেশ আ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন৷ অধ্যাপক ড. হাসান বাবু বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সোসাইটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন৷

এ বিষয়ে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ডিএসইর বর্তমান পরিচালক এবং শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারায় আসলেই আমি অনেক গর্বিত। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ৩০ বছরের সম্পৃক্ততা আছে। তাই, ভালো লাগার বিষয়টা অনেক বেশি। আমি মনে করি, আমাদের স্টক এক্সচেঞ্জ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অন্যান্যা দেশের মতো প্রোডাক্ট-সমৃদ্ধ স্টক এক্সচেঞ্জ হওয়া দরকার ছিল। এটা করতে পারলেই আমাদের সার্থকতা হবে। আমরা পূর্ণাঙ্গ পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই আমাদের পুঁজিবাজার পূর্ণাঙ্গ আকার ধারণ করবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...