ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অপরাধের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ গাজায় ইসরায়েলি অপরাধের বিষয়ে ‘অবিলম্বে, ব্যাপক এবং নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত’ করার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি রোববার আল জাজিরাকে আরও বলেছেন, গাজায় আরেকটি যুদ্ধবিরতি সহজতর করার এবং অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে কাতার।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে গত নভেম্বরের শেষের দিকে কাতারের মধ্যস্থতায় মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সেখানে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়। এক সপ্তাহব্যাপী এই যুদ্ধবিরতিতে ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে ৮০ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়।
তবে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শেষ হয়েছে। সেদিন থেকেই ইসরায়েল গাজায় তাদের আক্রমণ জোরদার করেছে এবং গাজার একজন সরকারি মিডিয়া কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে ১৫ হাজার ৫২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েল এবং হামাসকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার কার্যালয় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত আরও ত্বরান্বিত করবে।
রোববার ইসরায়েল এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিজের চার দিনের সফর শেষ করার সময় করিম খান বলেন, ‘(সংঘাতরত) সকল পক্ষকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে হবে। আপনি যদি তা না করেন, তাহলে আমার অফিস যখন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে তখন যেন অভিযোগ করবেন না।’
করিম খান বলেন, তিনি সংঘর্ষের উভয় পক্ষের ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন। তার ভাষায়, ‘বর্তমান সংঘাতের সময় অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে সময়মত, স্বাধীনভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদন্ত হওয়া উচিত।’
আল জাজিরা বলছে, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত আইসিসি হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র স্বাধীন আদালত যা গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ গুরুতর অপরাধের তদন্ত করে থাকে। এটি ২০২১ সালে ফিলিস্তিনি অঞ্চলে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসরায়েলের পাশাপাশি হামাস এবং অন্যান্য সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল।
এদিকে করিম খান অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অবশ্যই মৌলিক খাদ্য, পানীয় এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের সুযোগ থাকতে হবে।
এর আগে অবশ্য তিনি বলেছিলেন, গাজায় সাহায্য বিতরণে বাধা দেওয়া হলে তা আইসিসির এখতিয়ারের অধীনে যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।