কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করতে দলীয় নির্বাচনের পরিবর্তে ব্যক্তি নির্বাচনের মত দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। একই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠেয় সব ধরনের নির্বাচন স্থগিত করেন তিনি।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সঙ্গে দেখা করে ৪০ সদস্যের একটি টিম দুই ডিজির পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। নির্ধারিত সময়ে পদত্যাগ না করলে পরে ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০তলা ভবনে সর্বদলীয় ডাক দিয়েছিলেন। এরপর আবারও গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। তখন ড. আহসান এইচ মনসুর এসব কথা বলেন।
এদিন দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও ড. হাবিবুর রহমানের পদত্যাগ দাবিতে উত্তপ্ত হয় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা সকাল থেকে একাধিকবার বৈঠক করে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পদোন্নতি পাওয়া দুজন ডেপুটি গভর্নরকে পদত্যাগের দাবি জানান।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিগত সরকারের সময় যে দুইজন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগপ্রাপ্ত তাদেরকে অপসারণ করতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে জানানো হয়েছে এবং এ বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।
নজরুল ইসলাম বলেন, এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের সরকারের নিয়োগ দেওয়া দুই ডেপুটি গভর্নর রয়েছেন। তাদের অবিলম্বের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। ডিজি এক ও ডিজি দুইতে পরিবর্তন আনার দাবি জানানো হয়েছিল আমাদের পক্ষ থেকে। গভর্নর বলেছেন এই বিষয়ে তিনি ব্যবস্থা নিবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তা এস আলম ও বিভিন্ন গ্রুপকে যারা সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
নজরুল ইসলাম জানান, গভর্নর তাদেরকে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। কারণ সম্প্রতি সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্বাচন নিয়ে যেভাবে কাজ করেছে তাতে সুস্পষ্টভাবে সেই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে নির্বাচন হচ্ছে তা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্থগিত থাকবে বলেও গভর্ন তাদেরকে জানিয়েছেন বলেও জানান নজরুল ইসলাম।
গভর্নরের বক্তব্যের কারণেও ব্যাংকিংখাতে এক ধরণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, গভর্নরের বক্তব্যের কারণে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন অনেক গ্রাহকরা। তাই পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন ধরণের স্ট্যাটমেন্ট দেওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলেও তিনি জানান।
গত ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর ইসলামী ব্যাংকে আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যাংকখাতেও আন্দোলন শুরু হয়। ইসলামী ব্যাংকে এস আলমের ক্ষমতার বলয় থেকে মুক্ত করার দাবিতে ৬ অগাস্ট ইসলামী ব্যাংকের সামনে আন্দোলন করেন ব্যাংকটির কয়েকশ কর্মী।
বিক্ষোভের হাওয়া লাগে বাংলাদেশ ব্যাংকেও। ৭ অগাস্ট তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান ও পলিসি উপদেষ্টার পদত্যাগে উত্তাল হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এরপর ওই সপ্তাহেই গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, পলিসি উপদেষ্টা ও দুই ডেপুটি গভর্ন পদত্যাগ করেন। সেই সময়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাকি দুই ডেপুটি গভর্ন ছিলেন নুরুন নাহার ও হাবিবুর রহমান। প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য এই দুই ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সে সেসময়।
বিক্ষোভে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক বায়েজিদ সরকার ছাত্র-জনতা অভূত্যানে নিহত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ৫ অগাস্টের আগে চুক্তিভিত্তিক ডেপুটি গভর্নর যারা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত রয়েছেন তাদের অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি করেন। ৭ অগাস্টে যে দাবি করা হয়েছিল সেই দাবি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
বায়েজিদ সরকার বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর ৭ অগাস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকে বিক্ষোভ করা হয়। সেই সময় নানা রকমের দাবিও উপস্থাপন করা হয়। সেই দাবির মধ্যে ডেপুটি গভর্নরদের পদত্যাগের বিষয়টি ছিল। তবে এখনও তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে। তাদের এ পদ থেকে চলে যেতে হবে।
পরে বিক্ষুদ্ধ কর্মকর্তাদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে দুই ডেপুটি গভর্নরের পদত্যাগের দাবি তুলে ধরেন। এসময় গভর্নর তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।
গভর্নর বলেন, আর্থিকখাতের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। এই মুহূর্তে তাদের চাকরিচ্যুত করা হলে আর্থিকখাতে বড় ধরনের সমস্যার পাশাপাশি বহিঃবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। এজন্য তাদের পোর্টফোলিও দেখে কাজের পরিধির কমিয়ে আনা হবে বলে জানান।
এ সময় কর্মকর্তারা জানান, মূলত তাদের কারণেই আর্থিকখাতের সংস্কার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জবাবে গভর্নর বলেন, শিগগিরই আমি এ দু’জন ডেপুটি গভর্নরের বিষয়ে বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।