নভেম্বর ২১, ২০২৪

নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক পরিবেশ দূষণ করা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করছে, যা পরিবেশকে আরও বেশি ক্ষতি করছে। এ কথা উল্লেখ করে পরিবেশদূষণকারীদের ঋণ না দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ব্র্যাক ব্যাংকের ‘ব্লুম ইনটু দ্যা ফিউচার’ থিম নিয়ে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০২৩ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এ কথা বলেন।

যেসব ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করে চলেছে, তাদেরকে ব্যাংক থেকে ঋণ না দেওয়ার আহবান জানান তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক পরিবেশ দূষণকারীদের অর্থায়ন করছে। তবে ব্র্যাক ব্যাংক সে সব দূষণকারীদের অর্থায়ন করছে না। যেসব কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ করছে তাদের ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’ব্যাংক ঋণ

তিনি বলেন, ‘ব্র্যাক ব্যাংকের ওপর একটা আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা ব্র্যাক ব্যাংকের ধরে রাখতে হবে।’

ব্যাংকগুলোর প্রতি প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা ইন্ডাস্ট্রি যে প্রতিনিয়ত দূষণ করছে পরিবেশকে, সব নিয়ম ভঙ্গ করছে সেই ইন্ডাস্ট্রিকে যদি আপনারা ফান্ড দেন শুধুমাত্র সে রপ্তানি করছে বা হাজার মানুষের চাকরি দিয়েছে অথবা ডলার আয় করছে তাহলে কি সেটা সাসটেইনেবল ব্যাংকিং হবে। এটা মানুষের আগ্রহের বাইরে চলে যাবে।’

তিনি বলেন, যে ইন্ডাস্ট্রি এসব করে ব্যবসায় লাভ করছে, তারা কি তাদের লাভ আমাদের সাথে শেয়ার করছে। যদি তা শেয়ার না করে থাকে তবে মানুষ কেন এই দূষণ মেনে নিবে।

উপদেষ্টা বলেন, আমি যখন আদালতে কোনও দূষণকারী ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে কথা বলি, তারা বলে এই ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করা হয় তবে ২০ হাজার মানুষ চাকরি হারাবে, রপ্তানী কমে যাবে, ব্যাংক লোন পাওয়া যাবে না। তার মানে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো দূষণকারী ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে লোন দেয়৷ আমি ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংককে বলতে চাই, আপনারা ওইসব ইন্ডাস্ট্রিকে লোন দিয়েন না যারা অভ্যাসগতভাবেই পরিবেশ দূষণ করছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের টেকসই এজেন্ডা প্রকাশ এবং টেকসইতা নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি বাংলাদেশে এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন যেখানে শহরে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে কৃষি পরিকল্পনা, যেমন সবুজ অর্থায়ন, সার্কুলার ইকোনমি প্র্যাকটিস এবং টেকসই প্রযুক্তির মতো উদ্ভাবনী সমাধানে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সবুজ অর্থায়ন বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের গৃহীত উদ্যোগগুলো অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান সবুজ অর্থায়ন এবং টেকসই অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চায়, সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

উপদেষ্টা বলেন, সাধারণত কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মারা গেলে সেই প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এমনকি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও এমন হয়। তবে ব্র্যাক এখানে ব্যতিক্রম। তারা গত কয়েক বছর ধরে এক নম্বর এনজিও হিসেবে নিজেদের ধরে রেখেছে।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্তিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম. হাসান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড চিফ অপারেটিং অফিসার সাব্বির হোসেন, ব্র্যাক ব্যাংকের কর্পোরেট ও এসএমই ক্লায়েন্ট, সৌকহোল্ডার এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাসটেইনেবিলিটি বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশের সংস্কৃতির প্রসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়ে নূরুন নাহার বলেন, সাসটেইনেবিলিটি রেটিং শুধু একটি ব্যাংকের পারফর্ম্যান্সের পরিমাপকই নয়, বরং তা দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংকটির নেওয়া নানান উদ্যোগ, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলোও তুলে ধরে।

ব্রাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহেরিয়ার এস হাসান বলেন, আধুনিক ব্যাংকিং জগতে টেকসইতা এখন আর শুধু একটি পছন্দই নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়- উভয় ক্ষেত্রেই টেকসই ব্যাংকিং প্র্যাকটিসের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পেরে ব্র্যাক ব্যাংক গর্বিত।

তিনি বলেন, তারা পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস থেকে শুরু করে গ্রাহকদের পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করার মাধ্যমে তাদের প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে টেকসই অনুশীলন চালু করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ব্যাংকটি বিশ্বাস করে, টেকসইতার সাথে বৃদ্ধি যুক্ত করে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের রিপোর্টটি মূল্যবোধ-ভিত্তিক, দায়িত্বশীল এবং টেকসই ব্যাংকিং প্র্যাকটিসের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। সামাজিক এবং পরিবেশগত বিষয় বিবেচনা করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসারে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তিনি আরও বলেন, আমাদের রিপোর্টের এই বছরের থিম ‘রুম ইনটু দ্য ফিউচার’ একটি সমৃদ্ধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন, যেখানে টেকসইতা এবং আর্থিক সমৃদ্ধি পাশাপাশি অবস্থান করে। আমরা শুধু একটি ব্যাংক হিসেবেই বড় হচ্ছি না, বরং আমরা একটি বৃহৎ উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যতকেও নতুন রূপ দিচ্ছি।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...